বয়কটের বদলে নির্বাচনি লড়াইয়ের কৌশল এক ফিলিস্তিনির

জেরুজালেম দখল করা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণকে অস্বীকার করতে সেখানকার স্থানীয় রাজনীতি বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে ‘ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ’ (পিএ)। কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানের লাগাতার ব্যর্থতার মুখে বয়কটের বদলে ভিন্নভাবে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এক ফিলিস্তিনি। পেশায় প্রকৌশলী রামাদান দাবাশ জেরুজালেম সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। ভোটে জিতে জেরুজালেমবাসী ফিলিস্তিনিদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে চান তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে ‘সরে এসে’ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন সিটি হলের সদস্য হতে চাওয়ার এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।’ পিএর কাছে এই উদ্যোগ দখলদারিত্ব জায়েজ করা অপচেষ্টা মাত্র। পিএ পশ্চিম তীরে সীমিত মাত্রায় স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ পায়। ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে সেই স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে তরা জেরুজালেমকে প্রত্যাশা করে।s4.reutersmedia.net

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি দখলে যাওয়া জেরুজালেমর এক-তৃতীয়াংশ নাগরিক ফিলিস্তিনি। তাদের অভিযোগ, কর দিতে থাকলেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নাগরিক সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে উদাস। ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে তারা বরং ইহুদি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উন্নয়নে আগ্রহী। ইসরায়েলিদের এই উদাসীনতা আরও বেশি স্থায়ী হয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। তারা ঘোষণা করেছে, জেরুজালেম সিটি কাউন্সিল রাজনীতিতে ফিলিস্তিনিরা অংশ নেবে না।

কিন্তু নির্বাচন বয়কটের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ৫১ বছর বয়সী রামাদান দাবাশ বলেছেন, ‘পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দারা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত। কেউ কেউ দাবি করছে, এটা ইসরায়েলকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়া বা ইসরায়েলিকরণের চেষ্টা। কিন্তু তা সত্য নয়। নাগরিক সেবা গ্রহণ করাটা কোনও বৈধতা দানের প্রক্রিয়া নয়। এটা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের জন্য প্রয়োজন। আমাদের এছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। অধিকার দেওয়া হয় না, নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হয়।’

রয়টার্স লিখেছে, দাবাশ জেরুজালেমের যে সুর বাহের এলাকায় থাকেন সেখানে ময়লার স্তূপ ও ভাঙাচোরা রাস্তা খুব সাধারণ বিষয়। তাছাড়া দাবাশের জন্ম ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের কাছাকাছি বছরেই। তিনি জানেন কত দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংকট নিরসনের জন্য নেওয়া রাজনৈতিক উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। তাই ৩০ অক্টোবর জেরুজালেমের মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে লড়বেন চারজন ইহুদি প্রার্থী, যাদের একজন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র।

দাবাশের প্যানেলে রয়েছেন ১৩ ফিলিস্তিনি প্রার্থী যার অন্তর্ভুক্ত একজন ইহুদি ইসরায়েলি পরামর্শক। ৩১ সদস্যের সিটি কাউন্সিলে তার প্যানেলের অন্তত পাঁচজন জিতে আসবেন বলে আশাবাদী দাবাশ। তার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনার কম উল্লেখ করে রয়টার্স লিখেছে, জেরুজালেম মিউনিসিপাল এলাকায় দুই লাখ ২০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ফিলিস্তিনি রয়েছে। কিন্তু তাদের মাত্র ৩ শতাংশ ভোট দেয়।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র আদনান ঘাইথ মন্তব্য করেছেন, ‘এমন চেষ্টা আগেও ব্যর্থ হয়েছে, এবারও ব্যর্থ হবে। কারণ জেরুজালেমের বাসিন্দারা দখলদারিত্ব ও দখলদারিত্ব্বে ব্যবহৃত কৌশলকে জায়েজ করার কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যাখ্যান করবে।’ তবে শুধু প্রত্যাখ্যানের আশাবাদেই থেমে নেই নির্বাচনের বিরোধিতাকারীরা। আজিজ আবু সারাহ নামের আরেকজন ফিলিস্তিনিও মেয়র পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সিটি হলের সামনে তার দিকে ডিম ছুঁড়ে মারে প্রতিবাদকারীরা। এ ঘটনার পর তিনি দ্রুতই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা বাতিল করেন। এখন দেখার বিষয়, দাবাশ প্রতিবাদের মুখে কী করেন।