ফিলিস্তিনির হামলায় ইসরায়েলি সেনা সদস্য ও ধর্মযাজক নিহতের দাবি

অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনির গুলিতে ইসরায়েলের এক সেনা সদ্য ও ইহুদি ধর্মযাজক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার (১৭ মার্চ) এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সোমবার গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইহুদি ধর্মযাজক মৃত্যুবরণ করেন। সন্দেহভাজন ফিলিস্তিনি হামলাকারী প্রথমে ছুরি দিয়ে একজন সেনা সদস্যকে হত্যা করে। পালানোর সময় ওই সেনা সদস্যের অস্ত্র দিয়ে আশেপাশের যানবাহন ও অন্যান্য গাড়িতে গুলি করে, এতে ওই ধর্মযাজক ছাড়াও আহত হন আরেক সেনা সদস্য। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার কাজে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে নেতানিয়াহু সরকারের এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে।প্রতীকী ছবিজাতিসংঘের তথ্য অনুসারে,  ২০১৮ সালে ইসরায়েলিদের হাতে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ছিল ২৯৫ জন। ওই একই সময়ে ফিলিস্তিনিদের হাতে নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ছিল ১৪ জন। গত সপ্তাহে টেম্পল মাউন্ট এলাকায় একটি পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারে এক ফিলিস্তিনি। ওই একই দিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হত্যা করে দুই ফিলিস্তিনিকে।
নিহত রাব্বি আচিয়াদ এটিনগার (৪৭) এলি বসতির বাসিন্দা ছিলেন। এলোপাথাড়ি গোলাগুলির সময় তিনি একটি বাসের ভেতরে ছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনিও হামলাকারীর দিকে পাল্টা গুলি ছোড়েন। দ্য গার্ডিয়ান এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছে, অধিকৃত ভূমিতে বসতি স্থাপনকারী অনেকে ইসরায়েলিই ব্যক্তিগত অস্ত্র সঙ্গে রাখেন। এদিকে দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রবিবার একজন সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সেনা সদস্যের নাম সার্জেন্ট গাল কেইডান। আরেকজন গুলিবিদ্ধ সেনা সদস্য সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্টরা তাকে মনে করেন, সন্দেহভাজন ফিলিস্তিনি। তবে ইসরায়েলি সরকার এখনও তার নাম পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেনি। যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে কোনও সশস্ত্র গোষ্ঠীর সম্পর্ক থাকার কথা জানা যায়নি। তবে তাকে গ্রেফতারের জন্য ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে তারা নিশ্চিত করেছে, সন্দেহভাজনের বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়ার প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, এরকম হামলা নিরুৎসাহিত করতে জড়িতদের বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়াটাকে একটি কৌশল বলে মনে করে ইসরায়েল।
আগামী ৯ এপ্রিলে ইসরায়েলের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন লিকুদ সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী মিরি রেগেভ হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে বিরোধী নেতা বেনি গান্টজের সমালোচনা করে বিবৃতি দেন। তার অভিযোগ, গান্টজ এমন একজন ফিলিস্তিনি নেতাকে সহযোগিতা করেন, যে ফিলিস্তিনি নেতা সহিংসতায় উসকানি দেন। ইসরায়েলের সাবেক সেনাপ্রধান বেনি গান্টজ এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেছেন, রেগেভ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য নিহত ইসরায়েলিদের ব্যবহার করতে চাইছেন।
২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর আয়েশা রাবি নামের এক নারী নিহত হন। তিনি তার তার স্বামীর সঙ্গে গাড়িতে করে পশ্চিম তীরের তাপুয়াহ জংশনের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। বাদী পক্ষ শুরু থেকেই বলে আসছিল, এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলিরা দায়ী। তাদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতেই রাবির মৃত্যু হয়েছে। পাথর ছুঁড়ে হত্যার বিষয়ে ইসরায়েলি সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা পাথরে তার ডিএনএর উপস্থিতি পেয়েছেন। হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ইহুদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।