‘ছায়াযুদ্ধের প্রস্তুতি’ নিতে মিলিশিয়াদের নির্দেশ ইরানের

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতা সম্প্রতি বাগদাদে ইরাকি মিলিশিয়াদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং সেখানে তিনি মিলিশিয়া নেতাদের ‘ছায়াযুদ্ধের প্রস্তুতি’ নেওয়ার কথা বলেছেন। ব্রিটিশ সংবাদামধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে এই তথ্য জানা গেছে।

4669

ইরানের দুটি উচ্চ পদস্থ গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইরানের প্রভাবশালী কুদস বাহিনীর প্রধান কাসেম সুলেইমানি তিন সপ্তাহ আগে তাদের সমর্থিত মিলিশিয়াদের একটি বৈঠক ডাকেন। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক আহ্বান করা হয়। আঞ্চলিক মিত্রদের এই নির্দেশনা দেওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা করে। এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় যে, মধ্যপ্রাচ্য হুমকির মুখে রয়েছে। বৃহস্পতিবার ইরাকে মোতায়েনকৃত ব্রিটিশ সেনাদের জন্য সতর্কতার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাজ্য।

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, সুলেইমানি গত পাঁচ বছর ধরে ইরাকের শিয়া গোষ্ঠীদের নিয়মিত বৈঠক করলেও এবারে বৈঠকটির প্রকৃতি ও ধরণ ছিল ভিন্ন। একটি সূত্রের মতে, অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার আহ্বান ছিল না ঠিকই, তবে তা অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার নির্দেশ থেকে খুব দূরবর্তীও কিছু ছিল না।

এই বৈঠকের পরই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইরাকি কর্মকর্তাদের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশ ও ইরাকি কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে চাইছেন। তাদের আশঙ্কা ইরাক নতুন সংঘর্ষের ক্ষেত্র হয়ে ওঠতে পারে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের ছায়াতলে থাকা সবগুলো মিলিশিয়া গোষ্ঠী সুলেইমানির ডাকা বৈঠকে হাজির হয়। বৈঠকের বিষয়টি জানতে পেরে এক সিনিয়র কর্মকর্তা উদ্বেগ জানিয়ে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

অভিজাত কুদস বাহিনীর প্রধান হিসেবে মিলিশিয়াদের কৌশলগত ও কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সুলেইমানির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গত ১৫ বছর ধরে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের ক্ষমতার বিকাশে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন তিনি। তার ভূমিকার কারণেই উভয় দেশে ইরান সমর্থিত বাহিনীর উপস্থিতি বেড়েছে এবং ওই অঞ্চলটিকে ইরানের পক্ষে নিয়ে আসা হয়েছে।

উল্লেখ্য পারমাণবিক চুক্তি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই কূটনৈতিক বিরোধ ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গিবিমানবাহী রণতরী ও অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পর থেকে এই উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর রবিবার আমিরাতের উপকূলে চারটি ট্যাংকারে বিস্ফোরণ ও সৌদি আরবের রিয়াদের কাছে আরামকোর দুটি তেলের স্থাপনায় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। মার্কিন তদন্তকারীদের বিশ্বাস, ইরান অথবা তাদের সমর্থিত কোনও গ্রুপ এই বিস্ফোরণের সাথে জড়িত। ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেলে সৌদি স্থাপনায় ড্রোন হামলার কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে তেহরান বিস্ফোরণে নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।