মিসরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজকীয় মমিগুলোকে নতুন জাদুঘরে স্থানান্তর

মিসরের রাজকীয় মমিগুলোকে নতুন একটি জাদুঘরে স্থানান্তর করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। শনিবার জমকালো এক শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে নতুন ঠিকানায় নিয়ে যাওয়া হয় সেগুলোকে। রাজপরিবারের রক্ত ও মর্যাদার কথা বিবেচনা করে এই শোভাযাত্রা উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

রাজকীয় মামিদের সংরক্ষণ প্রক্রিয়া জোরদারের অংশ হিসেবে ফুসতাত এলাকায় স্থাপিত নতুন জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী এসব মমিগুলোকে। পুরো আয়োজনে ব্যয় হয়েছে কয়েক মিলিয়ন ডলার।

শনিবার জাঁকজমকপূর্ণ ও ব্যয়বহুল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার ১৮ জন রাজা ও চার জন রানির অক্ষতপ্রায় এসব মমি নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। এ সময় ২১ বার গান স্যালুট দিয়ে তাদের স্বাগত জানান মিসরের প্রেসিডেন্ট জেনারেল সিসি। ইউনেস্কো ও বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রধানরাও নতুন জাদুঘর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।Egypt mummy parade 03

বর্ণাঢ্য প্যারেডের সাজানো গোছানো গাড়িতে করে এসব প্রাচীন শাসকের মমি নিয়ে যাওয়া হয় তাদের নতুন নিবাসে। মিসরীয় সভ্যতার ওপর নির্মিত নতুন এই জাদুঘরটির নাম দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইজিপশিয়ান সিভিলাইজেশন।

শনিবার ঠিকানা বদল করা এসব রাজা রানিদের মধ্যে সপ্তদশ শতাব্দীর রাজা দ্বিতীয় সেকেনেনরে থেকে শুরু করে খৃস্টপূর্ব দ্বাদশ শতাব্দীর রাজা নবম র‍্যামসেসও রয়েছেন। এর মধ্যে রাজা দ্বিতীয় র‍্যামসেস বরাবরই ছিলেন মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি ৬৭ বছর শাসন করেছেন এবং নিউ কিংডমে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় ফারাও। বলা হয় যে, তিনিই প্রথম কোনও শান্তি চুক্তিতে সই করেছিলেন। আরেকজন রানি হাটসেপসুট। ওই সময়ে কোনও নারীর ফারাও হওয়ার প্রথা না থাকলেও তিনি শাসক হয়েছিলেন।Egypt mummy parade 04

মমিবাহী প্রতিটি গাড়ি সুন্দর করে সাজানো হয়। রাস্তায় চলার পথে এগুলো যাতে ঝাঁকুনি না খায় সেজন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া মমিগুলো নিয়ে যাওয়ার পথটিও মসৃণ করে তোলার জন্য ভালোভাবে মেরামত করা হয়।

ফারাওদের মৃতদেহ মমি করে রাখার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় প্রাচীন মিসরে। ১৮৮১ সালে থেকে ১৮৯৮ সালের মধ্যে প্রাচীন মিসরের রাজধানী থিবস থেকে মমিগুলো উদ্ধার করা হয়। আধুনিককালে এই জায়গাটি লাক্সর নামে পরিচিত।

এর আগেও এসব মমিকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। লাক্সর থেকে রাজধানী কায়রোতে আনা হয়েছে নীল নদ দিয়ে নৌকায় করে। কিছু মমিকে আনা হয়েছিল ট্রেনের প্রথম শ্রেণির বগিতে।Egypt mummy parade 05

কর্মকর্তারা আশা করছেন, নতুন জাদুঘরে স্থানান্তর করার পর এগুলো সারা বিশ্ব থেকে প্রচুর পর্যটক আকর্ষণ করবে। এর ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠবে পর্যটন শিল্প যা মিসরের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। সূত্র: আল জাজিরা, ভয়েস অব আমেরিকা।