ইসরায়েলের একক আধিপত্যের যুগ শেষ: হামাস

পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা বা ফিলিস্তিনের অন্য যে কোনও স্থানে সংঘাতের ঘটনায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের একক আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিরাও এখন তেল আবিবকে দাঁতভাঙা জবাব দিচ্ছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মুখপাত্র ফৌজি বারহুম।

দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের জনগণের সাহসী প্রতিরোধের ভূয়সী প্রশংসা করেন হামাস মুখপাত্র। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে যে ঐক্য ও সংহতির বন্ধন গড়ে উঠেছে এ ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়েছে।

হামাসের এই প্রভাবশালী নেতা বলেন, এবারের সংঘাত শুরু হয়েছে পশ্চিম তীরের বায়তুল মুকাদ্দাসের অধিবাসী ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে গাজা থেকে ইসরায়েল-বিরোধী হামলার মাধ্যমে। কাজেই ইহুদিবাদী অপশক্তিকে ধ্বংস করার আন্দোলনে সমগ্র ফিলিস্তিনবাসীর একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত।

সম্প্রতি পবিত্র রমজান মাসের শেষ দিনগুলোতে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরে বিশেষ করে বায়তুল মুকাদ্দাসের ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপক দমন অভিযান চালায় দখলদার বাহিনী। এর প্রতিবাদে গত সোমবার পর্যন্ত তেল আবিবকে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেয় হামাস।

সংগঠনটির বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে দমন অভিযান বন্ধ না হলে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েল অভিমুখে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রকেট হামলা চালানো হয়। এতে এখন পর্যন্ত ৯ ইসরাইলি নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলায় ইসরাইলজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন শহরে মুহুর্মুহু রকেট হামলার সময় সাইরেনের বিকট শব্দে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রাণ বাঁচাতে ইসরায়েলিরা বেশিরভাগ সময় ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছে।

এক সময় ইসরায়েলি ট্যাংকের সামনে যে ফিলিস্তিনিরা শুধু পাথর নিক্ষেপ করে প্রতিবাদ জানাতো আজ তাদের এই সামরিক সক্ষমতাকে দুই পক্ষের শক্তির ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে গাজা উপত্যকায় গত কয়েক দিন ধরে ইসরায়েলি বর্বরতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছে অন্তত ১৩৭ ফিলিস্তিনি। দখলদার বাহিনীর এমন নৃশংসতার প্রতি দৃশ্যত সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের দিকে যখন হাজার হাজার রকেট ছুটে যায় তখন তাদেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলেও জানান বাইডেন।

হামাস বলছে, ফিলিস্তিনিদের বলপূর্বক তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের প্রতিবাদে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে তারা। তবে নিজ বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বাইডেন। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বিমান হামলায় নারী, শিশুসহ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি নিয়েও কোনও কথা বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এসব উপেক্ষা করে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষা’র বয়ান হাজির করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর ‘যতক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজন’ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে বরাবরই সোচ্চার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ইসরায়েলি তাণ্ডবের নিন্দা জানিয়েছেন। বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে এ নিয়ে কথা বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক ইসরায়েলকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া প্রয়োজন। তাদের এখানে হস্তক্ষেপ করা দরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ইসরায়েলকে একটা শক্ত শিক্ষা দেওয়া।

ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের কথা বিবেচনা করতেও পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান তুর্কি প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির ভার্চুয়াল সভায়ও এ নিয়ে কথা বলেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, যারা চুপ থেকে কিংবা প্রকাশ্যে ইসরায়েলি রক্তপাতকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, জেনে রাখা উচিত, একদিন তাদেরও পালা আসবে। সূত্র: পার্স টুডে, আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি।