ইসরায়েল আমাদের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে পারেনি: হামাস

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার জোর প্রচেষ্টা চালায় দখলদার বাহিনী। তবে শনিবার গাজায় দলটির প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার জানিয়েছেন, ১১ দিনের ওই তাণ্ডবে ইসরায়েল তাদের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই নেটওয়ার্কের তিন শতাংশেরও কম ধ্বংস করতে পেরেছে তারা।

শনিবারের ভাষণে ইয়াহিয়া সিনওয়ার তার দল কিভাবে ইসরায়েলের সামরিক উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিয়েছে আলাদা আলাদাভাবে তার তালিকা করে তুলে ধরেন।

বিবিসি-র মধ্যপ্রাচ্য সম্পাদক সেবাস্টিয়ান আশার বলছেন, সিনওয়ার তার এই বক্তৃতায় নিজ দলের পক্ষ থেকে আরও একবার বিজয় দাবি করেছেন।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ১১ দিনের তাণ্ডবের বিপরীতে হামাসের পাল্টা প্রতিরোধকে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হামাসের সামরিক সক্ষমতার একটি মহড়া হিসেবে উল্লেখ করেন সিনওয়ার। তিনি বলেন, এই সংঘাতে হামাস বেশি শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে।

বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সম্পাদক সেবাস্টিয়ান আশার বলছেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ার দাবি করেছেন তার দল শক্তিমত্তার যে প্রমাণ দিয়েছে তার সুবাদে হামাসের এখন পিএলও-র পুর্নবিন্যাস দাবি করার অধিকার তৈরি হয়েছে।

তিনি বলছেন, হামাস, ইসলামিক জিহাদ এবং অন্যান্য উপদলগুলোর অংশগ্রহণ না থাকলে পিএলও-র আলোচনা শুধু কথাবার্তার মধ্যেই সীমিত থাকবে। তারা কোনও কিছু অর্জন করতে পারবে না।

সিনওয়ার আরও বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আরব বিশ্বের দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা এবং ফিলিস্তিনিদের বিভেদের কারণেই দখলদার বাহিনী গাজায় হামলা চালাতে উৎসাহিত হচ্ছে।

এদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি। তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশের চাপে বাধ্য হয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় তেল আবিব। তবে এটি কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় রয়েছে।

তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিস থেকে হামাসের মুখপাত্র বলেন, ‘ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে সম্মান না দেখিয়ে প্রতিদিনই পশ্চিম তীরের শহরে আগ্রাসন চালাচ্ছে। তারা তো আল কুদস শহরের ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে যে কোনও মুহুর্তে আবারও যুদ্ধ শুরু করতে বাধ্য হবে হামাস।’

ইসরায়েলি গোলার আঘাতে এখনও লণ্ডভণ্ড গাজা উপত্যকা। ত্রাণ সহযোগিতার অপেক্ষায় বহু মানুষ। যা ছিল সবই চোখের সামনে স্বপ্নগুলো মাটিতে মিশে গেছে ১১ দিনের যুদ্ধে। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনিরা।

আবু জুহুরি উল্লেখ করেন, ‘মিসরের মধ্যস্থতায় গত ২১ মে থেকে যে দুর্বল যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আসছে ফিলিস্তিনের জনগণ। কিন্তু এটি টিকে থাকা নির্ভর করছে তেল আবিবের ওপর। ইসরায়েলের সহযোগিতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় সংঘাত অনিবার্য।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১১ দিনের ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ শিশু, ৪০ নারী এবং ১৬ জন বৃদ্ধও রয়েছেন। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি। সূত্র: বিবিসি, আনাদোলু এজেন্সি।