ইরানের পর সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের পথে সৌদি আরব

ইরানের পর সিরিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, এক দশকেরও বেশি আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল সৌদি আরব ও সিরিয়া। তবে সম্প্রতি দেশ দুটি পুনরায় তাদের দূতাবাস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা আরব বিশ্বে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত। 

সিরিয়া সংশ্লিষ্ট একটি আঞ্চলিক সূত্র মতে, সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের চুক্তির পর দামেস্ক ও রিয়াদের যোগাযোগ বেড়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম মিত্র হলো ইরান।

সিরিয়ার আসাদের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপের মধ্যে রিয়াদ ও দামেস্ক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা ও আরব বিশ্বে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন সিরীয় প্রেসিডেন্ট।

দামেস্ক সংশ্লিষ্ট দ্বিতীয় একটি সূত্র বলেছে, রোজার পরে এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর দূতাবাস পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশের সরকার।

তৃতীয় সূত্র উপসাগরীয় অঞ্চলের এক কূটনীতিকের মতে, সিরিয়ার একজন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে সৌদি আরবের আলোচনার ফলাফল হিসেবে দূতাবাস চালুর সিদ্ধান্ত এসেছে।

বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে সূত্র তিনটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছে। এই বিষয়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিরিয় সরকার বার্তা সংস্থাটির মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

দীর্ঘ বিরোধিতার পর ইরান ও সিরিয়ার সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সংকটে কেমন ভূমিকা রাখবে। ধারণা করা হচ্ছে এই সম্পর্ক সংঘাত অবসানে ভূমিকা রাখতে পারে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও ইয়েমেনে পরস্পরবিরোধী অবস্থান ছিল সিরিয়া-ইরান ও সৌদি আরবের।

সুন্নি নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব ও কাতারসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির কয়েকটি আঞ্চলিক মিত্র সিরিয়ার আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিল। ইরান ও রাশিয়ার সহযোগিতা ও সমর্থনে আসাদ সিরিয়ার বেশিরভাগ ভূখণ্ডে বিদ্রোহকে দমন করতে সক্ষম হন।

মার্কিন মিত্র সৌদি আরবের আসাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোর পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে ওয়াশিংটন। গৃহযুদ্ধের সময় আসাদ সরকারের বর্বরতা এবং একটি রাজনৈতিক সমাধানের উপায় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরব লিগে ফিরবে সিরিয়া?

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত আসাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে নেতৃত্ব দিয়েছে। সম্প্রতি স্ত্রী আসমা আসাদকে নিয়ে আমিরাত আবুধাবি সফর করেছেন সিরীয় প্রেসিডেন্ট।

দূতাবাস চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও সৌদি আরব অনেক বেশি সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে। উপসাগরীয় কূটনীতিক বলেছেন, উচ্চপদস্থ সিরীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা রিয়াদে দুই দিন অবস্থান করেছিলেন। তার সফরে খুব শিগগিরই দূতাবাস পুনরায় চালু করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এক সূত্র এই সিরীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হুসাম লুকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তিনি সিরীয় গোয়েন্দা কমিটির প্রধান ছিলেন।

মধ্যে একটি কর্মকর্তাকে হুসাম লুকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে, যিনি সিরিয়ার গোয়েন্দা কমিটির প্রধান। সূত্রটি বলেছে, সৌদি আরবের সঙ্গে সিরীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার আলোচনার মধ্যে ছিল, জর্ডানের সঙ্গে সিরীয় সীমান্তে নিরাপত্তা এবং সিরিয়া থেকে আরব উপসাগরে ছড়িয়ে পড়া ক্যাপ্টাগন নামের একটি মাদকদ্রব্যের চোরাচালান বন্ধ করা।

বিরোধী দমনে আসাদ সরকারে নৃশংস দমন-পীড়ন নীতির কারণে ২০১১ সালে আরব লিগে সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।

মার্চ মাসের শুরুতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ বলেছিলেন, আরব লিগে সিরিয়াকে ফিরিয়ে আসতে পারেন আসাদ। তবে এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করার সময় এখনও আসেনি। 

কূটনীতিক সূত্রটি বলেছে, এপ্রিলে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য আরব শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে ভোটের পথ প্রশস্ত করতে পারে সিরিয়া-সৌদি আরব আলোচনা।

২০১৮ সালে দামেস্কে নিজেদের দূতাবাস পুনরায় চালু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির যুক্তি ছিল, সিরিয়ার সংঘাত সমাধান করতে হলে দেশটিতে আরব দেশগুলোর উপস্থিতি বাড়ানো প্রয়োজন।

এক সময় মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া আরব দেশগুলোর সঙ্গে নতুন যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছেন আসাদ। তবে দেশগুলোর পক্ষে সিরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখনও বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।

সূত্র: রয়টার্স