জিম্মি উদ্ধারে নেতানিয়াহুর পদক্ষেপে বিভক্ত ইসরায়েলিরা

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর যুদ্ধ ঘোষণা করা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের দৃঢ় সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু হামাসের হাতে ১৯৯জন জিম্মি উদ্ধারে তার নেওয়া পদক্ষেপে ইসরায়েলিদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। জিম্মিদের আত্মীয় ও স্বজনরা তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

তেল আবিবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদর দফতরের সামনে জিম্মিদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হলেন নিখোঁজ ১৯ বছর বয়সী রনি এশেলের দাদি জেহাবা এশেল। তিনি বলেছেন, রনিকে রক্ষার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র কোথায়?

সেনাবাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগে ঘাটতি রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তার প্রশ্ন, মন্ত্রিরা কোথায়? প্রধানমন্ত্রী কোথায়? উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কোথায়?

নিখোঁজ রনি এশেলের দাদির মতো ১৯৯ জন জিম্মি ও নিখোঁজদের স্বজনরা বিক্ষোভ করেছেন। তাদের মুক্ত করতে সরকারের পদক্ষেপ দাবি করছেন তারা। সম্ভাব্য পদক্ষেপ হিসেবে তারা বন্দি বিনিময়ের কথা বলছেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকেই সরকারের সমালোচনা করতে খুব সতর্ক। তাদের আশঙ্কা তাদের বক্তব্য হয়ত হামাসের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপকে ব্যাহত করতে পারে। হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতা নিয়ে ইতোমধ্যে জনগণের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। এবার বন্দি মুক্তির বিষয় নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ছেন নেতানিয়াহু।

ছবি: এপি

কয়েকজন বলেছেন, বন্দিদের মুক্তি করার বদলে হামাসের ওপর হামলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রমাণ করছে নেতানিয়াহুর ক্ষমতা ছাড়া উচিত।

সাবেক সেনা তেজাভিয়া শুমুয়েলভিচ বলেছেন, এমনকি সেনাপ্রধান, গোয়েন্দা প্রধান বলেছেন আমরা দায়ী, আমরা দায় নিচ্ছি। আমরা স্বীকার করছি আমরা দায়ী। কিন্তু নেতানিয়াহু, কখনও ব্যর্থ হন না।

তিনি বলেন, অনেকে বলছেন এখন নতুন নেতার সময় নয়। কিন্তু আমরা বলছি সময় এখন। এটি রাজনীতি নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রতিদিন দায়িত্ব পালনকালে আমরা আরও মানুষ হারাচ্ছি।

‘তিনি অযোগ্য’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে শুমুয়েলভিচ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জিম্মিদের ও তাদের পরিবারের অনুভূতির চেয়ে নেতানিয়াহুর কাছে লিকুদ পার্টির সমর্থকদের মত গুরুত্বপূর্ণ।

ইতামার গাভি নামের আরেকজন বলেন, আমি মনে করি তিনি ইসরায়েলকে একটি অন্ধকার স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

ইসরায়েলের বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় যোগ দেওয়া সাবেক সেনাদের এক বলছেন, তিনি এই সমস্যা তৈরি করেছেন।

অপর একজন বলেন, তিনি সমস্যা তৈরি করেননি। আসলে সমস্যা তিনিই। ইসরায়েলের যা প্রয়োজন তিনি উল্টোটা করছেন প্রতি দিন, প্রতি মিনিটে।

৭ অক্টোবর হামলার এক সপ্তাহের বেশি সময় পর রবিবার নেতানিয়াহু কয়েকজন জিম্মির আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, যেসব পরিবার তার দলকে সমর্থন করে তাদের সঙ্গেই তিনি দেখা করেছেন। তবে তার কার্যালয় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এখন পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার দৃঢ়ভাবে হামাসের সঙ্গে জিম্মিদের মুক্ত করতে আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। কিছু জিম্মির পরিবার সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করছে।