জাবালিয়ার একাংশ গুঁড়িয়ে দিলো ইসরায়েল, রাফাহতে নিহত ৫

উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার (২১ মে) সেখানে ট্যাংক ও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় একটি হাসপাতালসহ আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। ওইদিন ইসরায়েলি বিমান হামলায় দক্ষিণে রাফাহ শহরে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

চলতি মাসে গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে একযোগে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। হামলার কারণে কয়েক লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। সাহায্য প্রবাহকে তীব্রভাবে সীমিত করার কারণে অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

৭৫ বছর আগে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের জন্য জাবালিয়ায় একটি বিস্তৃত শরণার্থী শিবির নির্মাণ করা হয় যেটি জাবালিয়া শরণার্থী শিবির নামে পরিচিত। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। স্থানীয় বাজারের কাছে দোকানপাট এবং সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে তারা।

জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে পুনরায় অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীটি হামাসকে পুনরায় সংগঠিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে এই অভিযান শুরু করেছে তারা। এর কয়েক মাস আগে সেখানে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার দাবি করেছিল সেনারা।

গত দিনে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপের একটি ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ‘প্রায় ৭০টি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু’কে ধ্বংস করেছে সেনারা। এর মধ্যে সামরিক স্থাপনা, অস্ত্রের গুদাম, ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং পর্যবেক্ষণ পোস্ট রয়েছে।

ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা বলেছেন, জাবালিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছিল। তখন হাসপাতালের বিছানায় এবং স্ট্রেচারে থাকা রোগীদের নিয়ে বাইরে ছুটে যান আতঙ্কিত চিকিৎসাকর্মীরা।

হাসপাতালের প্রধান হুসাম আবু সাফিয়া বলেন, ‘প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি জরুরি বিভাগের প্রবেশদ্বারে আঘাত করে। আমরা প্রবেশ করার চেষ্টা করি এবং তখনই দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে এবং তৃতীয়টি আঘাত হানে পাশের ভবনে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভবনটির ভেতরে থাকা রোগীদের কাছে ফিরে যেতে পারিনি…জরুরি বিভাগে শিশু, বয়স্কদের সেবা প্রদান করে থাকে।’

বাসিন্দারা এবং চিকিৎসকরা বলেছেন, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো তৃতীয় দিনের মতো জাবালিয়া হাসপাতাল, আল-আওদা হাসপাতাল অবরোধ করছে। জেনেভায়, ডব্লিউএইচও-এর মহাপরিচালক টেড্রোস আডানম গ্রেবিয়াসিস বলেছেন, উত্তর গাজার অসুস্থ ও আহতদের হামলার শিকার হওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।

টেড্রোস বলেন, ‘উত্তর গাজায় সেবা প্রদান করছে এমন হাসপাতাল মাত্র দুটি অবশিষ্ট আছে। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে তাদের সক্ষমতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এসময় আরও ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ ও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। তখন আরও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান সশস্ত্র যোদ্ধারা। এর প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।