ইসরায়েলি হামলায় নিহত কে এই হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিল?

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর উচ্চপদস্থ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। শুক্রবারের (২০ সেপ্টেম্ব) এই হামলায় ১২ জন নিহত ও ৬৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে আকিলের নিহত হওয়ার বিষয়ে হিজবুল্লাহ এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর অভিজাত বাহিনী রাদওয়ান ফোর্সের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইব্রাহিম আকিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার সম্পর্কে তথ্য দিতে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। হামলার সময় তিনি হিজবুল্লাহ ও একটি অজ্ঞাত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর যৌথ বৈঠকে ছিলেন বলে জানা গেছে। এই হামলায় কমপক্ষে দুটি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।

ইব্রাহিম আকিলকে হত্যার দাবি হিজবুল্লাহর জন্য আরেকটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে চলতি সপ্তাহে, হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহৃত পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে ৩৭ জন নিহত ও তিন হাজারের মানুষ আহত হন। এই বিস্ফোরণ হিজবুল্লাহর ওপর একটি নজিরবিহীন আক্রমণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ইব্রাহিম আকিল হিজবুল্লাহর সশস্ত্র বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। এর আগে জুলাই মাসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শুকর নিহত হন। আকিলের নিহত হওয়ার ঘটনা সত্য হলে তা হিজবুল্লাহর সামরিক বাহিনীর জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, তাহসিন নামেও পরিচিত ইব্রাহিম আকিল হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ সামরিক কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৮৩ সালে বৈরুতের মার্কিন দূতাবাস ও মার্কিন মেরিন কোরের ব্যারাক হামলায় তার ভূমিকার জন্য আকিলকে যুক্তরাষ্ট্র খুঁজছে। ওই হামলায় দূতাবাসে ৬৩ জন ও মেরিন কোরের ব্যারাকে ২৪১ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়। এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল ইসলামিক জিহাদ অর্গানাইজেশন। এটি হিজবুল্লাহর একটি সেল হিসেবে পরিচিত।

বৈরুতে শুক্রবারের হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

১৯৮০-এর দশকে মার্কিন ও জার্মান নাগরিকদের অপহরণের নির্দেশদাতা হিসেবেও আকিলের নাম উল্লেখ রয়েছে। আকিলের নেতৃত্বাধীন রাদওয়ান ফোর্স ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর আন্তঃসীমান্ত যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার পেজার বিস্ফোরণে আকিল আহত হন এবং শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। এরপরই ইসরায়েল তার ওপর হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনাস্থলে একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষ স্তূপে পরিণত হয়, ধুলায় ঢাকা পড়ে আশেপাশের এলাকা। লেবাননের বেসামরিক প্রতিরক্ষাবাহিনী ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া জীবিতদের উদ্ধারে কাজ করছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ধ্বংস হওয়া ভবনের ধূসর ধ্বংসাবশেষ রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে এবং গাড়িগুলো ধুলায় ঢেকে গেছে।