‘জায়নবাদী দাবি মিথ্যা’, লেবাননে ইসরায়েলি স্থল অভিযানের খবর প্রত্যাখ্যান হিজবুল্লাহর

ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননে প্রবেশ করেছে এবং হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবির পর এই খবর সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে হিজবুল্লাহ। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) গোষ্ঠীটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা লেবাননের ভেতরে অনুপ্রবেশের কোনও ঘটনা ঘটেনি। আর কোনও সরাসরি সংঘর্ষও হয়নি। ফিলিস্তিন-বিষয়ক সংবাদমাধ্যম প্যালেস্টাইন ক্রোনিকল এ খবর জানিয়েছে।

হিজবুল্লাহর মিডিয়া প্রতিনিধি মোহাম্মদ আফিফ বলেছেন, দখলদার বাহিনী লেবাননে প্রবেশ করেছে বলে যেসব দাবি করা হচ্ছে, সব মিথ্যা।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে কোনও স্থল সংঘর্ষ হয়নি।

আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আফিফ সতর্ক করে বলেছেন, যদি ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে তাহলে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা পুরোপুরি প্রস্তুত আছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, সম্প্রতি ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ঘাঁটি এবং মোসাদের সদর দফতরে বোমা হামলা মাত্র শুরু। হিজবুল্লাহ লেবাননে প্রবেশকারী শত্রু বাহিনীর ওপর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাবে।

এদিকে, সিএনএনকে উদ্ধৃত করে এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, লেবাননে চালানো অভিযানে ব্যবহৃত বাহিনীর আকার ও সক্ষমতা শুধু সীমিত অভিযানের জন্য উপযুক্ত। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে কোনও স্থল সংঘর্ষ হয়নি।

ওয়াশিংটন পোস্টও একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে, কোনও স্থল সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েল লেবাননে বড় ধরনের আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনাও করছে না।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি

অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেয়ি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক টুইটে জানান, দক্ষিণ লেবাননে তীব্র লড়াই চলছে। বাসিন্দাদের লিতানি নদীর উত্তরে গাড়িতে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির আল-জাজিরাকে বলেছেন, এই মুহূর্তে হিজবুল্লাহকে পরাজিত করা এবং উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার সঠিক সময়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আগেই ঘোষণা করেছিল যে, তাদের ৯৮তম ডিভিশনের কমান্ডো এবং প্যারাট্রুপার ব্রিগেডের পাশাপাশি ৭ম আর্মড ব্রিগেড লেবাননের অভিযানে অংশ নিচ্ছে। তবে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই বাহিনীগুলো শুধু সীমিত অভিযান চালাচ্ছে এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে কোনও স্থল সংঘর্ষ হয়নি।

ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা

হিজবুল্লাহর একাধিক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, তারা মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাদের এবং তাদের সামরিক সরঞ্জামের ওপর আঘাত হেনেছে। হিজবুল্লাহ দাবি করেছে যে, তাদের গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের মাতুলা ঘাঁটি এবং শতুলা বসতির কাছের সেনাদের ওপর সরাসরি আঘাত হানা হয়েছে। এছাড়া, আদাইসে ও কফর কিলার কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর আরও হামলার দাবি করেছে হিজবুল্লাহ। এই হামলাগুলোকে তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন এবং লেবাননের প্রতিরক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছে।

মঙ্গলবারের শুরুতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়। তাদের মুখপাত্র দক্ষিণ লেবাননে কেন্দ্রীভূত অভিযানের কথা নিশ্চিত করেন।

ইসরায়েলের এই ঘোষণার আগে, এক লেবানিজ সামরিক সূত্র জানিয়েছিল যে, লেবাননের সেনারা দক্ষিণ সীমান্তের কাছে তাদের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করছে। পরে লেবানিজ সেনাবাহিনী সংবাদমাধ্যমের ওইসব প্রতিবেদন অস্বীকার করে। প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়েছিল যে, তারা কয়েক কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা থেকে পিছু হটেছে। তারা এসব তথ্যকে ভুল বলে দাবি করে।

এছাড়া, জাতিসংঘ মহাসচিবের একজন মুখপাত্র জানান, লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউনিফিল) ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে টহল দিতে পারছে না।

হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া উত্তেজনা বৃদ্ধির পর থেকে লেবানিজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, এখন পর্যন্ত লেবাননে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।