সিরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে। ইসলামি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী জোট দেশটির দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতাকে ভেঙে দিয়ে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নিয়েছে। এই দ্রুতগতির আক্রমণ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের ধারাবাহিকতাকে পাল্টে দিয়েছে।
কীভাবে বিদ্রোহীরা এগিয়েছে?
মাত্র এক সপ্তাহে বিদ্রোহীরা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বড় অংশ সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে দখল করেছে। প্রথমে তারা সিরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর আলেপ্পো দখল করে। এরপর হামা ও হোমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও জয়ী হয়। রবিবার বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্ক পৌঁছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান ঘোষণা করে।
কাদের মধ্যে লড়াই চলছে?
সিরিয়ার সরকার
১৯৭০ সালে ক্ষমতায় আসা আলাওয়ি সম্প্রদায়ের আসাদ পরিবার দীর্ঘকাল সিরিয়া শাসন করছে। ২০১১ সালের আরব বসন্তে বাশার আল-আসাদের দমননীতি গৃহযুদ্ধের সূচনা ঘটায়। ইরান, রাশিয়া ও হিজবুল্লাহর সমর্থনে আসাদ সরকার তার হারানো এলাকা পুনরুদ্ধার করেছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সহযোগীরা নিজেদের সংকটে ব্যস্ত।
হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)
প্রথমে আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত এইচটিএস আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিদ্রোহী দল হিসেবে পরিচিতি পায়। তাদের নেতা আবু মুহাম্মাদ আল-জোলানি দাবি করেছেন যে তাদের লক্ষ্য ‘অত্যাচারী শাসন থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করা।’
কুর্দি বাহিনী
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি বাহিনী উত্তর-পূর্বে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে তাদের শত্রু তুরস্ক কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযানে লিপ্ত।
গৃহযুদ্ধের মানবিক প্রভাব
গৃহযুদ্ধের কারণে ৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আসাদ সরকার রাসায়নিক অস্ত্রসহ বিভিন্ন নিষ্ঠুর পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।
বিদেশি শক্তির ভূমিকা
তুরস্ক
তুরস্ক বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছে এবং সিরিয়ার সীমান্তে প্রভাবশালী অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রায় পরোক্ষ অনুমোদন দিয়েছেন।
রাশিয়া
রাশিয়া সিরিয়ার সরকারের প্রধান মিত্র। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ কমে গেছে।
ইরান ও হিজবুল্লাহ
ইরান সিরিয়ার সরকারকে সমর্থন দিলেও তাদের সামরিক উপস্থিতি এখন হ্রাস পাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল। বর্তমানে তারা কুর্দি নেতৃত্বাধীন অঞ্চলে ৯০০ সেনা মোতায়েন রেখেছে।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস