ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় আরও ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় বুধবার রাতভর অন্তত ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে ইসরায়েল গাজায় তার বোমাবর্ষণ অভিযান ও স্থল অভিযান পুনরায় শুরু করার পর এই হামলা চালানো হয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তিন দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৫১০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

হামাস বলেছে, বুধবার ইসরায়েলের ঘোষিত স্থল অভিযান যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি ‘নতুন ও বিপজ্জনক’ লঙ্ঘন। গত জানুয়ারিতে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা এগোতে ব্যর্থ হওয়ার পর মঙ্গলবার ইসরায়েল হামলা পুনরায় শুরু করে। 

ইসরায়েল সতর্ক করেছে যে, হামাস বাকি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় হামলা তীব্রতর হবে। ইসরায়েল বলেছে, হামাস এখনও ৫৯ জন জিম্মিকে আটকে রেখেছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) বৃহস্পতিবার বলেছে, তারা গাজায় ‘লক্ষ্যভিত্তিক স্থল কার্যক্রম’ শুরু করেছে, যা তারা ‘উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে আংশিক বাফার’ তৈরি করার প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা এই পদক্ষেপকে ‘সীমিত স্থল অভিযান’ বলে অভিহিত করেছে। 

আইডিএফ-এর মুখপাত্র কর্নেল অবিচায় আদরায়ি বলেছেন, বাহিনীগুলোকে নেটজারিম করিডোর নামে পরিচিত একটি স্ট্রিপের কেন্দ্র পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে, যা উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিভক্ত করে। 

মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা ‘পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করেছে’ এবং এখন যেকোনও যুদ্ধবিরতি আলোচনা ‘গোলাবর্ষণের মধ্যে’ হবে। 

ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিকে প্রথম পর্যায়ের বাইরে নেওয়ার বিষয়ে সম্মত হতে পারেনি, যা গত ১ মার্চ শেষ হয়েছে। হামাস ইসরায়েলের শর্তে যুদ্ধবিরতি পুনরায় আলোচনা করতে সম্মত হয়নি, যদিও তারা একটি জীবিত আমেরিকান জিম্মি এবং চার জিম্মির দেহ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।

হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মার্চের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় প্রবেশকারী সব খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে কৌশলগত অংশ হিসেবে এই সরবরাহগুলো দখল করার অভিযোগ করেছে, যদিও তারা কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়। হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে ২৫ ইসরায়েলি ও পাঁচ থাই জিম্মিকে জীবিত অবস্থায় মুক্তি দেওয়া হয়। 

হামাসের হামলার জবাবে গাজায় ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। মঙ্গলবার পুনরায় অভিযান শুরু করার আগে ৪৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ইসরায়েলের অভিযানে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।