ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী প্রধান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম কাতার। এই কাতারকে উদ্দেশ করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় শনিবার (৩ মে) এক বিবৃতিতে দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কাতার যেন উভয়পক্ষের হয়ে দ্বৈত কথাবার্তা বন্ধ করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় তারা সভ্যতার পক্ষে, না কি হামাসের পক্ষে। কাতার এই বিবৃতিকে ‘উসকানিমূলক’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মিসর ও কাতার চেষ্টা করেও যুদ্ধবিরতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ইসরায়েল ও হামাস কেউই তাদের মূল দাবিতে পিছু হটতে রাজি নয়। উভয় পক্ষই আলোচনার ব্যর্থতার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, গাজায় এখনও আটক থাকা ৫৯ জন জিম্মির মুক্তি এবং হামাসকে নিরস্ত্র করে গাজার ভবিষ্যৎ শাসনে সম্পূর্ণরূপে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে—এই শর্তে কোনও চুক্তি হবে। হামাস এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাসের পক্ষ থেকে শর্ত রাখা হয়েছে, যুদ্ধের স্থায়ী অবসান এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না হলে কোনও জিম্মি বিনিময় চুক্তি হবে না।
রবিবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, ‘ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া উসকানিমূলক বক্তব্য কাতার দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়িত্বের ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’
আল-আনসারি গাজার সংঘাতকে ‘সভ্যতার পক্ষে যুদ্ধ’ হিসেবে উপস্থাপন করার সমালোচনা করে বলেন, এটি ইতিহাসের সেইসব শাসকগোষ্ঠীর মতো যারা বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধকে ন্যায্যতা দিতে মিথ্যা গল্প তৈরি করত।
তিনি আরও বলেন, কাতারের মধ্যস্থতায় ইতিপূর্বে মুক্তিপ্রাপ্ত ১৩৮ জন জিম্মিকে কীভাবে মুক্ত করা হয়েছিল—মারাত্মক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে, না কি মধ্যস্থতার মাধ্যমে? অথচ সেই মধ্যস্থতাই এখন অবমূল্যায়িত ও আক্রমণের শিকার।
আল-আনসারি গাজার মানবিক বিপর্যয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘শ্বাসরুদ্ধকর অবরোধ, পরিকল্পিত না খাওয়ানো, ওষুধ ও আশ্রয়ের অস্বীকৃতি এবং মানবিক সহায়তাকে রাজনৈতিক চাপে পরিণত করা হয়েছে।’
শুক্রবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানায়, ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় একটি বিস্তৃত সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এতে বোঝা যায়, যুদ্ধ বন্ধ ও হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টায় কোনও অগ্রগতি হয়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাব দিতে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজা চরমভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।