X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

ছয় মাসে তৃতীয়বার ট্রাম্প-নেতানিয়াহু সাক্ষাৎ: ঘনিষ্ঠতা নাকি উত্তেজনা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৭ জুলাই ২০২৫, ১৬:৩৭আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৯:২০

ছয় মাসে তৃতীয়বারের মতো ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউজে বরণ করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্য কোনও বিশ্বনেতা গত ছয় মাসে এত ঘন ঘন হোয়াইট হাউজ সফর করেননি। একাধিক সাক্ষাৎ আসলে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত সম্পর্কের গভীরতাকে তুলে ধরছে। যদিও এই ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবসময় দুই দেশের নীতিগত সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এ খবর জানিয়েছে।

‘আমেরিকা ফার্স্ট’ (যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া) নীতির অধীনে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যে হোয়াইট হাউজের প্রধান কৌশলগত মিত্র হিসেবে সমর্থন দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর ফিলিস্তিনপন্থি মনোভাবের ওপর কঠোরতা আরোপ করেছে। তবে, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নেতানিয়াহুর আচরণে হতাশা প্রকাশে অস্বাভাবিকভাবে খোলামেলা ছিলেন ট্রাম্প। বিশেষ করে গত মাসে যখন তিনি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করে দুপক্ষকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আনেন।

চুক্তি কার্যকর হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন, ইসরায়েল। বোমাবর্ষণ বন্ধ করো। তোমাদের পাইলটদের এখনই দেশে ফিরিয়ে আনো!

তিনি পরে সাংবাদিকদের কাছে ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন, ইসরায়েল ও ইরান ‘কী যে করছে’ সেটা তারা নিজেরাই জানে না।

মধ্যপ্রাচ্য নীতি বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক উপদেষ্টা ও কার্নেগি এন্ডাউমেন্টের সিনিয়র ফেলো অ্যারন ডেভিড মিলার মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন, দুই নেতার সম্পর্ক এখন অনেকটাই স্পষ্ট। নেতানিয়াহু বুঝে গেছেন, যদি তিনি ট্রাম্পের ইচ্ছার পথে বাধা হন, তাহলে চাপ আসবেই।

ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে খামখেয়ালিপনা থাকলেও মিলার বলেছেন, তিনি নেতানিয়াহুকে এমন কিছুর সুযোগ দিয়েছেন যা কোনও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আগে পাননি। আর তা হলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলা।

তবে, এই প্রশাসন হামাস, হুথি ও ইরান- এই তিন আঞ্চলিক শত্রুদের সঙ্গে সরাসরি কূটনীতিতে জড়িত থাকাকালীন ট্রাম্প ইসরায়েলকে একপাশে ঠেলে দিয়েছেন। গত মে মাসে ট্রাম্পের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফরে মধ্যপ্রাচ্যে গেলেও ইসরায়েলে তার কোনও যাত্রাবিরতি ছিল না। এটি অস্বাভাবিক, কারণ দেশটি একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে এবং এর প্রায় ৭০ শতাংশ অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে।

যদিও বাইডেন প্রশাসন প্রকাশ্যে বলেছিল যে তারা গাজায় যুদ্ধের প্রথম বছরজুড়ে ইসরায়েলিদের ওপর কিছু চাপ বজায় রেখেছিল। ইসরায়েলে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছিলেন, মৌলিকভাবে, আমরা যা বলেছিলাম তার কিছুই ‘যুদ্ধ বন্ধ করো’ ছিল না।

ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ নেতানিয়াহুর কাছে ১৯ জানুয়ারি থেকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। নেতানিয়াহু উইটকফের দাবি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ১ মার্চের মধ্যে ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা পুনরায় শুরু করে এবং তখন থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে। ইরান ছাড়াও ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে নেতানিয়াহু সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনেও হামলা চালিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ‘আগামী সপ্তাহে একটি চুক্তি’ হতে পারে, যা নেতানিয়াহুর আগমনের পর হোয়াইট হাউজ থেকে একটি যৌথ ঘোষণার জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

কিন্তু মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ওমর রহমান বলেছেন, হামাসও চুক্তির একটি পক্ষ। সুতরাং এটি এমন কিছু নয়, যা কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ঘোষণা করতে পারে। এটি ট্রাম্পের স্টাইলও নয়, সুযোগ পেলেই তিনি ট্রুথ সোশ্যাল-এর মাধ্যমে ঘোষণা করবেন।

ট্রাম্প বলেছেন কাতার এবং মিসর ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় খুব কঠোর পরিশ্রম করেছে’ এবং ‘এই চূড়ান্ত প্রস্তাবটি সরবরাহ করবে’। যে যুদ্ধবিরতি ৬০ দিনের জন্য স্থায়ী হবে। তবে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে যে আলোচনা এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। পর্দার আড়ালে অনেক মতপার্থক্য বিদ্যমান, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির পর কী ঘটবে তা নিয়ে।

ইসরায়েল ট্রাম্পের কাছ থেকে লিখিত আশ্বাস চাইছে যে তাদের দাবি পূরণ না হলে গাজায় সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার অনুমতি দেওয়া হবে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১৪ বুধবার জানিয়েছে, বর্তমান প্রস্তাবে ট্রাম্পের একটি পার্শ্ব চিঠি রয়েছে। এই নথিতে ইসরায়েলকে ‘হামলা পুনরায় শুরু করার’ সবুজ সংকেত দেওয়া হবে যদি হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং এর নেতাদের নির্বাসনের বিষয়ে তাদের দাবি পূরণ না হয়।

মিলার ব্যাখ্যা করে বলেছেন, হামাসের জন্য প্রধান কিছু সমস্যা এখনও অমীমাংসিত রয়েছে এবং নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে আসার সময় আলোচনার সম্ভবত শেষ হবে না। একটি হলো ফিলিস্তিনি বন্দিদের সংখ্যা, যা গাজায় সম্ভাব্য ১০ থেকে ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে মুক্তি পাবে। আরেকটি হলো নিরবচ্ছিন্ন এবং নিরাপদ মানবিক সহায়তা প্রবাহের নিশ্চয়তা।

মিলার আরও বলেছেন, নেতানিয়াহুর জন্য সম্পূর্ণ বিজয় হলো হামাসের সিনিয়র নেতৃত্বকে উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করা। সম্ভবত তিন বা চারটি ভিন্ন আরব দেশে তাদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।

রহমানের মতে, যেকোনও যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলকে বাধ্য করানো মার্কিন রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেছেন, জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি টেকসই ছিল না, কারণ ইসরায়েলিরা (যুদ্ধ বন্ধ করতে) অনিচ্ছুক ছিল। আমেরিকানরা ইসরায়েলিদের এটি মেনে চলতে বাধ্য করতেও অনিচ্ছুক ছিল। ট্রাম্প কি সেখানে পৌঁছাতে পারবেন? আমি মনে করি এটির ক্ষমতা তার রয়েছে।

গত মাসে নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে কিছু আরব দেশের সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ খোলা যেতে পারে।

তার ও ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করা। তবে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, ইরানে ইসরায়েলের হামলা ও আঞ্চলিক অস্থিরতার কারণে রিয়াদ এখন খুব একটা আগ্রহী নয়।

সিরিয়ার নতুন সরকারও উপসাগরীয় ও পশ্চিমা দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে নিরাপত্তা সমঝোতা হতে পারে, তবে স্বাভাবিক সম্পর্কের সম্ভাবনা এখনও খুব দুর্বল।

সোমবারের বৈঠকে বড় কোনও ঘোষণা আসতে পারে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে মিলার বলছেন, এই সাক্ষাৎ ইসরায়েলি বা মার্কিন জনমত বদলাবে না। কিন্তু নেতানিয়াহু যদি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করেন, সেটার মূল্য তাকে দিতে হবে।

/এএ/এসকে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কেনিয়ায় গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি
রুশ হামলায় ইউক্রেনে নিহত ৪, আহত অর্ধশতাধিক
মিয়ানমারে সংঘাত, সীমান্ত পেরিয়ে মিজোরামে হাজারো মানুষ
সর্বশেষ খবর
নির্বাচন পেছানো নিয়ে জামায়াত কিছু বলেনি: সেক্রেটারি
নির্বাচন পেছানো নিয়ে জামায়াত কিছু বলেনি: সেক্রেটারি
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার ওপরে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার ওপরে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
সানস্ক্রিন ব্যবহারের এই নিয়মগুলো জানতেন?
সানস্ক্রিন ব্যবহারের এই নিয়মগুলো জানতেন?
ছয় মাসে ৫২৯টি রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৭৯
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির প্রতিবেদনছয় মাসে ৫২৯টি রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৭৯
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
আসন্ন নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, দ্বিতীয় জামায়াত: সানেমের জরিপ
আসন্ন নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, দ্বিতীয় জামায়াত: সানেমের জরিপ