যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৯৫

ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় একটি ক্যাফে, একটি স্কুল ও খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে বোমা হামলা চালিয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) চালানো এসব হামলায় কমপক্ষে ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া তারা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে আরও কয়েকজনকে আহত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরতি বিষয়ে আলোচনার আগে, গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ হামলা ছিল এটি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলের তীব্রতম এ হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ৬২ জন গাজা শহর ও উত্তর গাজার বাসিন্দা। উত্তর গাজা শহরের উপকূলবর্তী ‘আল-বাকা কাফেটেরিয়া’ নামের একটি ক্যাফেতে ইসরায়েলি হামলায় ৩৯ জন নিহত হন। এই হামলায় আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাব এবং নারী ও শিশুরা ছিলেন। তারা ঐ ক্যাফেতে এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন।

এক প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরীফ বলেন, ‘এই জায়গার কোনও রাজনৈতিক বা সামরিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এখানে অনেক মানুষ শিশুদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের জন্য জমায়েত হয়েছিল।’

হামলায় ক্যাফেটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং মাটিতে একটি বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে।

আল জাজিরার রিপোর্টার হানি মাহমুদ গাজা শহর থেকে জানান, ক্যাফেতে এই হামলা ‘কোনও ধরনের পূর্ব-সতর্কতা ছাড়াই’ হয়েছে।

এছাড়া সোমবারই ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহরের ‘ইয়াফা স্কুলে’ বোমা হামলা চালায়। ওই স্কুলে শত শত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল।

হামলার আগে পালিয়ে যাওয়া হামাদা আবু জারাদেহ বলেন, বাস্তুচ্যুত মানুষদের মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে এলাকা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল।

মধ্য গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের আল-আকসা হাসপাতালের আঙ্গিনাতেও হামলা চালায়। সেখানেও হাজার হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এবং আল জাজিরা কর্তৃক যাচাই করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, লোকজন আতঙ্কে পালাচ্ছে এবং আশ্রয়দাতা তাঁবুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী এই হাসপাতালের আঙিনায় অন্তত ১০ বার হামলা চালালো। চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ চাপের মধ্যে, এই ধরনের হামলা হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম আরও বিপর্যস্ত করছে।

গাজার সরকার-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি পদ্ধতিগত অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

গত ২২ মাস ধরে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল একাধিকবার গাজার বহু হাসপাতালকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলকে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার অভিযোগ এনেছেন।

এছঅড়া দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় খাদ্য সহায়তা বিতরণকেন্দ্রে অপেক্ষমাণ কমপক্ষে ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। বিতর্কিত মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন পরিচালিত এই সহায়তা কেন্দ্রটি খান ইউনুসে অবস্থিত। এই হামলায় আরও ৫০ জন আহত হয়েছেন।

এই ফাউন্ডেশনটি গত মে মাসের শেষদিকে গাজায় সীমিত ত্রাণ সরবরাহ শুরু করার পর থেকে এই ধরনের সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে হামলায় প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানায়, গাজার সহায়তা কেন্দ্রগুলোর কাছে মোতায়েন সেনাদের ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাতে বলা হয়েছে।’ প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি সেনাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, তাদের ‘কোনও হুমকি না থাকা সত্ত্বেও জনতার ওপর অতিরিক্ত প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের নির্দেশ’ দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধবিরতির উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।