ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সর্বশেষ পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা কোনও অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। আলোচনার সঙ্গে জড়িত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা সোমবার (৭ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, দোহার দুটি পৃথক ভবনে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
তার মতে, কাতারি ও মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরায়েল ও হামাস পরস্পরের মধ্যে বার্তা ও ব্যাখ্যা আদান-প্রদান করে। তবে কোনও অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আলোচনা সোমবার আবার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে সমঝোতার পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর মতো যথাযথভাবে অনুমোদিত ছিলেন না।। তাদের হাতে ‘বাস্তব ক্ষমতা’ ছিল না।
এদিকে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটনের পথে রওনা হয়েছেন।
নেতানিয়াহু জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার এই বৈঠক গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, তিনি তার আলোচকদের পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন যেন তারা একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি অর্জন করেন—যে শর্তগুলো ইসরায়েল গ্রহণ করতে পারে।
হামাস বলেছে, তারা সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাব ‘ইতিবাচক মনোভাব’ নিয়ে সাড়া দিয়েছে। তবে দুই পক্ষের মধ্যে এখনও বেশ কিছু মতপার্থক্য রয়েছে, যেগুলো না মেটালে কোনও চুক্তি সম্ভব নয়।
হামাস এখনও আগের মতোই তাদের মূল শর্তগুলো ধরে রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিরতির পর স্থায়ীভাবে সকল শত্রুতার অবসান এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার।
নেতানিয়াহুর সরকার এর আগে এই দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল।
ইসরায়েলি অবস্থানেও তেমন কোনও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার সময় নেতানিয়াহু বলেন, তিনি এখনও তিনটি প্রধান লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জীবিত ও মৃত সব জিম্মিদের মুক্তি ও প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা; হামাসের সক্ষমতা ধ্বংস করা—তাদের সেখান থেকে উৎখাত করা; এবং গাজা আর কখনও ইসরায়েলের জন্য হুমকি হবে না-তা নিশ্চিত করা।
কাতারি ও মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে—এই সব জটিল বিষয় অতিক্রম করে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা।
গত মার্চে আগের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল আবারও হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছে এবং প্রায় ১১ সপ্তাহ ধরে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে—যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তা আংশিকভাবে শিথিল হয়েছে।
ইসরায়েলি সরকার বলেছে, এসব পদক্ষেপ হামাসকে দুর্বল করার এবং জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টির অংশ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা হামাসের ১৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে এবং বেশ কিছু যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
তবে গাজায় বেসামরিক প্রাণহানির সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধু রবিবারই ৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—দোহায় চলমান আলোচনা কি সত্যিই দুই পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি সমঝোতা এনে দিতে পারবে? ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে এই যুদ্ধে ইতি টানার জন্য রাজি করাতে পারবেন?
ইসরায়েলের অনেকেই এখন বিশ্বাস করেন, বাকি জিম্মিদের রক্ষার জন্য হলেও যুদ্ধবিরতি দরকার।
নেতানিয়াহুকে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় আবারও ইসরায়েলের রাস্তায় বিক্ষোভ করে মানুষ-যাতে জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব হয়।
তবে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গেভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচসহ কয়েকজন কট্টরপন্থী নেতা রয়েছেন, যারা যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ না করে কোনও যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান জানিয়েছেন।