দাসযুগের যেসব চিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে এটা তারচেয়ে খুব ব্যতিক্রম নয়। দাসযুগে মালিকরা দাসদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখতেন বিক্রি করার জন্য। ক্রেতা দাস-মালিক নিজের পছন্দের দাসকে কিনে নিতেন। তারপর তাদের ইচ্ছেমতো যে কোনও শ্রমে বাধ্য করতেন। কিন্তু দাসযুগ পেরিয়ে মানুষ এখন আধুনিক সভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেও দাস ব্যবস্থা যেনও বার বার ফিরে আসছে। যেমন ঘটছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে প্রাণ নিয়ে লেবাননে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রে।
আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা-বিরোধী একটি এনজিও ফ্রিডম ফান্ড। লেবাননে পালিয়ে আসা সিরীয় শিশুদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তাদের প্রতিবেদন দাসযুগের কথাই মনে করিয়ে দেয়। প্রতিবেদনে সিরীয় শিশুদের কিভাবে জোরপূর্বক দাসোচিতভাবে শ্রমে বাধ্য করা হচ্ছে তা উঠে এসেছে। যেমন: শরণার্থী শিবিরের একজন সমন্বয়ক শিশুদের লাইন ধরে দাঁড় করান। সেখান থেকে মালিকরা তাদের কাজের জন্য শিশুদের নিয়ে যান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যার জমিতে শিবির স্থাপন করা হয়, তার কৃষিকাজে শ্রম দেওয়ার জন্যই শিশুদের নিয়ে যাওয়া হয়। আর এতে শিশুদের মা-বাবার বলার কিছুই থাকে না। শিশুদের বিপজ্জনক কাজের বিনিময়ে নগণ্য পরিমাণ পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: নারী ও শিশু আত্মঘাতীর ব্যবহার বাড়িয়েছে বোকো হারাম: জাতিসংঘ
মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ১০ লাখ সিরীয় লেবাননে আশ্রয় নিয়েছেন। যা লেবাননের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ। তাদের অনেকের কাজ করার অধিকারও নেই। আর ওই পরিবারগুলোকে খাদ্য, আশ্রয় ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য নামমাত্র মূল্যে বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য করা হচ্ছে।
স্থানীয় কর্মকর্তা, শরণার্থী, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও স্থানীয় এনজিও-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। শুধু শিশুই নয় প্রাপ্তবয়স্কদেরও জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি বেশকিছু যৌন নিপীড়নের ঘটনাও ঘটেছে।
আরও পড়ুন: লেবাননে শিশু অপহরণের চেষ্টার দায়ে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক অভিযুক্ত
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, শরণার্থীরা যতো মরিয়া হয়ে ওঠছেন, ততোই জোরপূর্বক শ্রমের ঘটনা বাড়ছে। দুটি সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, জোরপূর্বক শ্রম এখন তাদের জন্য সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।’
ফ্রিডম ফান্ড জানিয়েছে, শিশুদের বিভিন্ন শহরেও কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় বেকা ভ্যালি অঞ্চলের প্রায় সব শরণার্থী শিশুই জমিতে কাজ করে। সেখানে তাদের বিপজ্জনক কীটনাশক এবং সার নিয়ে কাজ করতে হয়। বিভিন্ন কারখানায় বিপজ্জনক অবস্থায়ও কাজ করতে তাদের বাধ্য করা হয়। এছাড়া ছোট শিশুদের রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি, ফুল বিক্রি ও জুতা বা পরিষ্কারের কাজ করানো হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কিছু লেবাননী মালিকের মতে, শিশুদের স্বল্প অর্থের বিনিময়ে পাওয়া যায় এবং তারা বড়দের থেকে অনেক বেশি বাধ্য।
মধ্যপ্রাচ্যের আরও খবর: তরুণ আরবদের মাঝে আইএস-বিরোধী মনোভাব বাড়ছে
সিরীয় শরাণার্থীদের সাহায্যে অনেক সংগঠনই কাজ করছে, কিন্তু দাসত্ব ও মানবপাচারের বিষয়গুলো সবসময় জোরালোভাবে আমলে নেওয়া হয় না। আর এগুলোর জন্যই শরণার্থীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ফ্রিডম ফান্ডের সিইও নিক গ্রোনো বলেন, ‘এই অবস্থায় লাখ লাখ শরণার্থী আরও মারাত্মক নিপীড়নের ঝুঁকিতে রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ধারিত হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ সূত্র: আল-জাজিরা।
/এসএ/এএ/