অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে: অমর্ত্য সেন

নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেননোবেল জয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বলেছেন, বিশ্বের কোথাও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডনে এক আলোচনায় এ কথা বলেন অমর্ত্য সেন।

বিশ্বের অন্যতম এ শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল ইকনোমিক্স (এলএসই)-এ ‘অমর্ত্য সেন লেকচার সিরিজ’ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানি আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীরের উপস্থাপনায় আলোচিত বিষয় ছিলো ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও গণতন্ত্রের এ প্রভাব’।

১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বলেন, ‘মানবাধিকারের জন্য আসমা জাহাঙ্গীরের লড়াই থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে হচ্ছে, যে কোনও পরিস্থিতিতেই আশা হারানো ভুল। অসহিষ্ণুতার চরম পর্যায়েও আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কিছু করতে পারি।’

পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আসমা জাহাঙ্গীর তার বক্তব্যে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের লেখা থেকে জনকল্যাণমূলক অর্থনীতির বিষয় তুলে ধরেন। বিশেষ করে অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকেই যে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সৃষ্টি হয় তা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন ভাষণে।

আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি প্রায়ই বলি অমর্ত্য সেন শুধু ভারতের নন, বিশ্বেরই একজন বুদ্ধিজীবী। তার (অমর্ত্য সেন) লেখায় তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে স্বাধীনতাকে দমিয়ে রাখার ফলে তা দারিদ্রতার দিকে নিয়ে যায়। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ যে কোনও দেশেই আমরা সব সময় অসহিষ্ণুতা প্রত্যক্ষ করেছি। অসহিষ্ণুতাকে সহ্য করাই এখন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসহিষ্ণুতা হলো সংক্রামক।’

আসমা আরও বলেন, ‘দেশগুলোর সীমানা পেরিয়ে এখন অসিহষ্ণুতা প্রপঞ্চে পরিণত হয়েছে... ধর্মকে বিচারের মাপকাঠিতে পরিণত করা হয়েছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সর্বজনীনতা রক্ষায় বৃহত্তর অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে। অসহিষ্ণুতাকে মেনে না নেওয়ার জন্য জনমত গড়ে তুলতে হবে।’

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পাকিস্তানকে বুঝতে হবে যে, প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকলে তাদের পক্ষে অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব নয়।’

দক্ষিণ এশিয়ার উগ্রবাদের উত্থানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া ক্লাবে স্বাগতম’। আসমা বলেন, ‘সুশীল সমাজকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কারণে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে।  বিশ্বের আমাদের বিপরীত একটি ধারা তৈরি করতে হবে।’

পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম নারী সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী আসমা এলএসই-এর শিক্ষার্থীদের কখনও হতাশ না হয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় লড়াই জারি রাখার আহ্বান জানান।

/এএ/