মানবতাবিরোধী অপরাধীর আইনজীবী ছিলাম না, তবে মীর কাশেম আলীর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছি: লর্ড কারলাইল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনি পরামর্শক ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইল জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তির আইনজীবী ছিলেন না তিনি। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতা মীর কাশেম আলীর পক্ষে তিনি বিবৃতি দিয়েছেন। বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ই-মেইলে এসব তথ্য জানিয়েছেন এই ব্রিটিশ আইনজীবী।

লর্ড কারলাইল (ছবি- সংগৃহীত)

বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে লর্ড কারলাইলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কয়েকটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে বাংলাদেশি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের আইনজীবী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিনা। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি নয়’।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পর মীর কাশেম আলীর পক্ষে বিবৃতি প্রকাশের কারণ জানতে চাইলে ব্রিটিশ আইনজীবী সরাসরি কোনও উত্তর দেননি। তিনি বলেন, ‘আমি এই বিচার প্রক্রিয়াকে ন্যায়সঙ্গত বা প্রচলিত  বিচারিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী যথাযথ বলিনি।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মীর কাশেম আলীর রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে দেওয়া এক বিবৃতিতে লর্ড কারলাইল পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে ‘অসঙ্গত, পক্ষপাতদুষ্ট, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমূলক ও প্রচলিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচারের মান অনুযায়ী হয়নি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি মানবতাবিরোধী এই অপরাধীর ফাঁসি স্থগিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিলেন।

লর্ড কারলাইল নিজেও একজন রাজনীতিক। হাউস অব লর্ডসের ক্রসবেঞ্চের একজন সদস্য তিনি। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তিনি নিয়মিত সেমিনার আয়োজন করে থাকেন। জামায়াতে ইসলামীকে আমন্ত্রণ জানানোয় এবং কারলাইলের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ না থাকার অভিযোগ তুলে ২০১৭ সালে তার আয়োজিত এক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই বিষয়ে জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য স্বাগত জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেমিনারের মাত্র ৫ মিনিট আগে আমাকে জানানো হয় এতে তারা অংশগ্রহণ করবে না। সেমিনারের মূল বিষয় ছিল সব অংশগ্রহণকারীদের সমান ও  উদ্দেশ্যমূলক মতবিনিময়। এক্ষেত্রে আমি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ছিলাম।’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া পৃথক এক সাক্ষাৎকারে কারলাইন বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে আইনি পরামর্শ দেবেন তিনি।
ই-মেইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হওয়া এবং আন্তর্জাতিক ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী তাকে সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘আমি আরও জানিয়ে রাখি, সম্প্রতি আমি কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছি। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বণ্টন নিয়ে এই সংস্থাটির গভীর আগ্রহ রয়েছে। আমি নিজেও এই বিষয়ে অনেক আগ্রহী।’
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইল সাধারণত গুরুতর অপরাধ, স্থানীয় সরকার এবং লাইসেন্স, পরিকল্পনা ও পেশাগত নিয়মশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সরকারি আইনের মামলায় বেশি অংশ নিয়ে থাকেন। সংসদীয় অধিকার ও আচরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। এ ছাড়া, বড় ধরনের বাণিজ্যিক প্রতারণা মামলার বেসামরিক ও অপরাধ দিকগুলোতে তিনি বিশেষ পারদর্শী। তিনি এমন অনেক মামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ওই দিন রাতে পৃথক ইমেইল বার্তায় বাংলাদেশে আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন লর্ড কারলাইল। তিনি বলেন, ‘আশা করছি দায়িত্ব পালন করতে আমি বাংলাদেশে আসবো। সেখানে (বাংলাদেশ) এরই মধ্যে দুর্দান্ত একটি দল কাজ করছে। তাদের সঙ্গে আমিও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবো। আমি মূলত সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা ও আদালতের স্বাধীনতার দিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখবো।’

খালেদা জিয়ার মামলার ব্যাপারে কোনও নথি দেখেছেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে কারলাইন বলেন, ‘আমি নথিপত্র দেখেছি। আরও কিছু দেখবো। আলামতের স্বল্পতা ও এটি সংগ্রহের প্রক্রিয়া নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’
এই মামলার ব্যাপারে তার আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে লর্ড কারলাইল বলেন, ‘আমি জালিয়াতি ও দুর্নীতি বিষয়ক মামলার ব্যাপারে আগ্রহী একজন ব্যারিস্টার। এছাড়া কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান হিসেবে সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের তাগিদও আমার মধ্যে কাজ করে।’

পরামর্শক হিসেবে তার আর্থিক লেনদেন বিষয়ে জানতে চাইলে এই ব্রিটিশ আইনজীবী বলেন, দায়িত্ব ও কাজের পরিধি অনুযায়ী অর্থ পাবেন তিনি। তবে এর পরিমাণ তিনি গোপন রাখতে চান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর-