‘জলবায়ু পরিবর্তন হোমওয়ার্কের চেয়েও খারাপ’

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে গত শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাস্তায় নেমেছিল যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। লন্ডনসহ কয়েকটি শহরে তারা সমাবেত হয়ে প্রদর্শন করেছে বিভিন্ন ব্যানার। সেসবে লেখা ছিল, ‘জলবায়ু পরিবর্তন হোমওয়ার্কের চেয়েও খারাপ,’ ‘আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এখনই পদক্ষেপ করুন’ ইত্যাদি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি বিশ্বজুড়ে চলা ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’ নামের আন্দোলনের অংশ, যা ১৬ বছর বয়সী এক স্কুল শিক্ষার্থী শুরু করেছিল। তার নাম গ্রেটা থুনবার্গ। গ্রেটা প্রতি শুক্রবার সুইডেনের সংসদ ভবনের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে।s1.reutersmedia.net

তিন বছর আগে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে একমত হয়েছিল। সেখানে নির্ধারিত হয়েছিল, দেশগুলো সম্ভব হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করবে। গত তিন বছরে এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জোরদার করা তো দূরে থাক বরং পদক্ষেপগুলো নিয়ে রাজনৈতিক বিভেদ আরও বেড়েছে। অথচ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির প্রভাবেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়। একদিকে যেমন দেখা যাচ্ছে দাবানল, অন্যদিকে তেমন দেখা দিচ্ছে হ্যারিকেন।

স্কুল পড়ুয়া শিশুদের এই উদ্যোগের এর ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিশুদের সচেতনতায় তিনি খুশি। কিন্তু স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হলে শিক্ষকদের পাঠদান কঠিন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছেন, দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী ক্লেয়ার পেরি। তিনি তাদের এই কর্মসূচির ব্যাপারে ‘অত্যন্ত গর্বিত।’ যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা লেবার পার্টির জেরেমি করবিন শিশুদের কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাদের ভবিষ্যতই সবচাইতে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

TELEMMGLPICT000187748730_trans_NvBQzQNjv4Bq1TJOa7BZ2Re4vzncv8bVr5IJUf7Hyxq67IAaSz0vTU0সপ্তাহখানেক আগে অক্সফোর্ড, কেমব্রিজসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৪ জন শিক্ষাবিদ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছিলেন, যা প্রকাশিত হয়েছে দেশটির সংবাদপত্র গার্ডিয়ানে। সেই চিঠির ভাষ্য, ‘জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে যে ভবিষ্যৎ দেখতে হবে, কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ রয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপের আরও অনেক শিশু-কিশোর পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে সরব হয়ে উঠেছে। জার্মানির বার্লিনে হাজার হাজার স্কুল শিক্ষার্থী একযোগে আবেদন জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।  সুইজারল্যান্ডেও শিশুদের ছোট ছোট কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সুইজারল্যান্ডে একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা তো রীতিমত ধর্মঘট পালন করেছে।
বেলজিয়ামে গত ২৪ জানুয়ারি প্রায় ৩৫ হাজার কিশোর-কিশোরী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে যথাযথ পদক্ষেপের দাবিতে মিছিল করেছে। সেখানে ‘ডাইনোসরেরাও ভেবেছিল, তাদের হাতে সময় আছে,’ ‘সমস্যা নয়, সমাধানের অংশ হোন’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়েছে। জার্মানিতেও চলছে জোর  প্রচারণা। সেখানকার কিশোর-কিশোরীদের একটি জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে, ‘দ্বিতীয় কোনও পৃথিবী নেই।’ নতুন প্রজন্ম বিশ্ব নেতাদের কাছে দাবি জানাচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস অ্যাকর্ড মেনে চলার।