শ্রমিক অধিকারে নাটকীয় পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেবে লেবার পার্টি

জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টির নির্বাচনি ইশতেহারে শ্রমিক অধিকারে নাটকীয় পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি থাকতে পারে। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে ব্রিটেনে ১৯৮০-র দশকের পর থেকে শ্রমিকদের অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন হবে। বদলে যাবে ২ কোটি শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণের পদ্ধতিও। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

4064

শনিবার দলটির শীর্ষ নেতারা ‘ক্লজ ফাইভ’ নামের এই নথির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আগামী সপ্তাহে করবিন বিষয়টি নিয়ে প্রচারণায় নামতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০১৭ সালের নির্বাচনি ইশতেহারেও এই বৈপ্লবিক প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু তখন বিষয়টি খুব বেশি আলোচনায় আসেনি। লেবার পার্টির প্রতিশ্রুতি অনুসারে, সমগ্র অর্থনীতিতে খাত অনুসারে শ্রমিক-মালিক দর-কষাকষির ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারিত হবে।

রেজুলেশন ফাউন্ডেশনের পরিচালক টরস্টেন বেল বলেছেন, এই পরিবর্তন শ্রম জগতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। পুরোপুরি ‘যৌথ দর-কষাকষি’ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের অর্থ হবে ২ কোটির বেশি শ্রমিকের মজুরি নির্ধারিত হবে মালিক ও ইউনিয়নের আলোচনার ভিত্তিতে।

ছায়া কর্মসংস্থানমন্ত্রী লরা পিডকক সেপ্টেম্বরে ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসে বলেছেন, ‘খাত-ভিত্তিক যৌথ দর-কষাকষির মাধ্যমে প্রত্যেক খাতের প্রতিটি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ও কাজের শর্তাবলী নির্ধারণ করা হবে। এর অর্থ হলো, শ্রমিকের মজুরি ও কাজের শর্তের বিষয়ে মালিকের একক কর্তৃত্ব থাকবে না। আইন অনুসারেই ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের আলোচনা করতে হবে। শ্রমিক ও মালিকের ক্ষমতার বর্তমান অসম সম্পর্কে ভারসাম্য আনতে এটি বড় ধরনের পদক্ষেপ’।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি স্পষ্ট নয় যে, লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে এই নীতি ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করবে নাকি সহসাই করবে। নিউ জিল্যান্ড সরকার ধীরে ধীরে এই নীতিতে পদার্পণের চেষ্টা করছে এবং ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা বাড়াতে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে।

এছাড়া শ্রম বাজার খাতে আরও যেসব সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে এক দশকের মধ্যে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৩২ ঘণ্টায় নিয়ে আসা। এ বছর ব্রাইটনে লেবার পার্টির সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ইশতেহারে লেবার পার্টি শূন্য কর্মঘণ্টা নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে। যার ফলে ৯ লাখ মানুষ প্রভাবিত হবে। এছাড়া ২৫০ বা এর অধিক কর্মী আছে এমন কোম্পানিকে শ্রমিকদের মালিকানা দিতে হবে ‘মালিকানা তহবিল’ গঠন করে। এতে উপকৃত হবেন এক কোটি মানুষ। 

ইউনিয়ন নেতারা শ্রমিকের দরকষাকষির ক্ষমতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন। ইউনাইট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লেন ম্যাকক্লাস্কি বলেন, ‘আমার মতে, শ্রম বাজারে কঠোর বিধি না থাকলে শ্রমিকদের অবাধ বিচরণ পদ্ধতি ভুল’।

গত সেপ্টেম্বরে লেবার পার্টির সম্মেলনে অভিবাসী সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবে বর্তমানে প্রচলিত ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবাধ চলাচলের মতো একটি নীতি গ্রহণ করা হবে। যার ব্যাপ্তি ইইউ-এর গন্ডি ছাড়িয়ে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর নাগরিকেরাও পাবে।