ভারতকে রাশিয়ার বিকল্প দেখাবেন জনসন

রাশিয়ার তেল ও প্রতিরক্ষা সামগ্রির ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে ভারতকে সহায়তার প্রস্তাব দেবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এই সপ্তাহে ভারত সফরের সময় এই প্রস্তাব দেবেন তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এই সফরে বরিস জনসনের কূটনৈতিক দক্ষতার পরীক্ষা হয়ে যাবে, নিজ দেশে ক্ষোভের মুখে থাকা জনসন এই সফরে খানিক বিশ্রামও পাবেন।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো ভারত সফর শুরু করতে যাচ্ছেন বরিস জনসন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে তিনি নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরালো করা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ নেতার এক মুখপাত্র।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর পশ্চিমা মিত্ররা ভারতকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলার আহ্বান জানায়। তবে রাশিয়ার অস্ত্র এবং জ্বালানির বড় ক্রেতা ভারত জাতিসংঘে রুশবিরোধী প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে। মস্কোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি দিল্লি। কিন্তু ইউক্রেনে বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।

এই মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মোদিকে বলেছেন, রাশিয়ার কাছ থেকে বেশি তেল কেনা ভারতের স্বার্থ নয়। জনসন এই বিষয়ে মোদিকে জ্ঞান দেবেন না বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।

দিল্লির সোসাইটি ফর পলিসি স্টাডিসের পরিচালক উদয় ভাস্কর বলেন, শ্রদ্ধা রেখে দেওয়া হলে জনসনের বার্তা সতর্কতার সঙ্গে শুনবে ভারত সরকার কিন্তু কৌশলগত মিত্র হিসেবে রাশিয়ার বদলে যুক্তরাজ্যকে গ্রহণ করার সুযোগ সীমিত।

উদয় ভাস্কর বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে রাশিয়ার ওপর ভারতের নির্ভরতার সমাধান যুক্তরাজ্য করতে পারবে না। তাদের যথেষ্ট তেল নেই কিংবা বিক্রির জন্য সঠিক ধরনের সামরিক সরঞ্জাম নেই।’

গত কয়েক বছরে পশ্চিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে ভারত। তবে এখনও অর্ধেকের বেশি অস্ত্রের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভর করে দিল্লি। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের সময় রুশ অস্ত্রের ওপরই ভরসা রেখেছে ভারত।

বরিস জনসন যখন ভারত সফরে পৌঁছাবেন তখনও তার নজর থাকবে লন্ডনে। সেখানে তার বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস লকডাউন ভেঙে ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টি করা নিয়ে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে জনসনের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে পার্লামেন্টারি তদন্ত হবে কিনা তা নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোটাভুটির কথা রয়েছে। সেই ভোটেও অনুপস্থিত থাকবেন জনসন।

নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য গুজরাট থেকে ভারত সফর শুরু করবেন জনসন। আশা করা হচ্ছে সেখানে তিনি নতুন বিনিয়োগ এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিতে নতুন সহযোগিতার ঘোষণা দেবেন। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, এবারই প্রথমবারের মতো কোনও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উপকূলীয় রাজ্য গুজরাট সফর করবেন।

গুজরাট থেকে শুক্রবার দিল্লি যাবেন বরিস জনসন। সেখানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এই বৈঠকে দুই নেতা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন। এই বছরের শুরুতে এই চুক্তি নিয়ে দুই দেশের আলোচনা শুরু হয়।

এই শতাব্দীর শুরুতে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্য সহযোগী ছিল যুক্তরাজ্য। তবে গত বছর তারা ১৭তম অবস্থানে নেমে গেছে বলে ভারত সরকারের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

ভারত দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থী ও দক্ষ কর্মীদের জন্য সহজে ব্রিটিশ ভিসার দাবি জানিয়ে আসছে। তবে যেকোনও বাণিজ্য আলোচনার জন্য এই দাবি মেনে নেওয়া ব্রিটিশ সরকারের জন্য রাজনৈতিকভাবে কঠিন হবে।

এছাড়া এবারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তার সঙ্গে বড় কোনও বাণিজ্য প্রতিনিধি দল থাকছে না। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে এবারের সফরে রাজনীতিই বেশি গুরুত্ব পাবে।

সূত্র: রয়টার্স