একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে যার শক্তিশালী দলিল ও প্রত্যক্ষদর্শী প্রমাণ রয়েছে, তবু বিশ্ব তা স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে’। এসময় তিনি এই গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ গণহত্যা দিবস স্মরণে লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের বঙ্গবন্ধু লাউঞ্জে ‘১৯৭১ বাংলাদেশ গণহত্যা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান।

শনিবার লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।Audiance

হাইকমিশনার তার বক্তব্যে বাঙালি গণহত্যার বিষয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যার মধ্যে সানডে টাইমসে অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের প্রধান নিবন্ধ ‘গণহত্যা’ এবং দ্য টেলিগ্রাফ এবং বিবিসির গণহত্যার বিষয়ে একই রকম প্রতিবেদন রয়েছে। এসব প্রতিবেদন বিশ্বকে হতবাক করেছে এবং বিশ্ব নেতাদের পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করেছে বলে উল্লেখ করেন হাইকমিশনার।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে, স্যার পিটার শোর এমপি, যিনি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এরপর আরেকটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় যেটি অ্যাকশন বাংলাদেশ এবং ২৩৩টিরও বেশি ক্রস-পার্টি সদস্যদের দ্বারা সমর্থিত। পূর্ব বাংলায় গণহত্যার অবসান এবং বাংলাদেশের স্বীকৃতির আহ্বান জানানো হয় প্রস্তাবটিতে”।বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসানবক্তব্য রাখছেন সৈয়দ বদরুল আহসান

কংগ্রেসম্যান রো খান্না এবং কংগ্রেসম্যান স্টিভ চ্যাবোটের নেতৃত্বে মার্কিন কংগ্রেসের প্রস্তাবের প্রশংসা করেন হাইকমিশনার। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এর অনুরূপ কিছু করা দরকার বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী এবং সম্প্রদায়ের নেতাদেরকে ব্রিটিশ রাজনৈতিক, মানবিক এবং থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সার্কেলের মধ্যে বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে আরও বেশি সচেতনতা তৈরি করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।

সৈয়দ বদরুল আহসান তার মূল বক্তৃতায় বলেন, “বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যা কম্বোডিয়া, বসনিয়া ও রুয়ান্ডার চেয়ে কোনোভাবেই কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়”। তিনি বাঙালি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশে ও বিদেশে সমন্বিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পরামর্শ দেন।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সমাজকর্মী শাহিনা চৌধুরী এবং বিশিষ্ট ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের নেতা আবদুল আহাদ চৌধুরীও অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ২৫ মার্চের গণহত্যায় নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তৃতা করেন।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু, তার শহীদ পরিবারবর্গ, ২৫ মার্চের শহীদদের এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার চির শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। একাত্তরের গণহত্যায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এসময় গণহত্যার উপর একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।