যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থায় আবারও একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে এ বিষয়ে সোমবার (১২ মে) সীমান্ত নিরাপত্তা, আশ্রয় ও অভিবাসন বিলের প্রতিবেদন (বর্ডার সিকিউরিটি, অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন বিল রিপোর্ট) পেশ করা হবে। সরকারের প্রস্তাবনায় দক্ষ কর্মী ভিসার জন্য যোগ্যতা স্নাতক স্তরে উন্নীত করা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাসের অনুমতির (ইন্ডিফিনেট লিভ টু রিমেইন- আইএলআর) নিয়ম আরও কঠোর করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা আরও কঠোর করা এবং বসবাসের দীর্ঘ সময়সীমা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
রিফর্ম ইউকের সাম্প্রতিক নির্বাচনি সাফল্যের পর অভিবাসনবিরোধী উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই লেবার পার্টি সরকারের পক্ষ থেকে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব এবং সম্ভাব্য প্রভাব
অভিবাসন নিয়মে পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হলো, দক্ষ কর্মী ভিসার যোগ্যতা বৃদ্ধি করে কম-দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন হ্রাস করা। এছাড়া, অবৈধভাবে কর্মী নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার আওতা বিস্তৃত করা হতে পারে। পাশাপাশি, অভিবাসীদের দ্রুত নির্বাসন আপিলের নিষ্পত্তি এবং শরণার্থীদের জন্য 'বিশেষভাবে গুরুতর অপরাধ'-এর একটি বিস্তৃত সংজ্ঞা প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে।
রিফর্ম ইউকের সাম্প্রতিক নির্বাচনি সাফল্য একটি অস্থির রাজনৈতিক পটভূমি তৈরি করেছে, যা লেবার এবং কনজারভেটিভ উভয় দলকেই প্রভাবিত করছে। ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ সরকারের এই পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে সরকার জোর দিয়ে বলছে যে, উচ্চ অভিবাসন হার কমাতে এই পদক্ষেপগুলো জরুরি।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে কেয়ার হোমগুলোতে বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। সামগ্রিক অভিবাসন হ্রাসের লক্ষ্যে অভিবাসন বিধিমালার একটি বড় ধরনের সংস্কারের অংশ হিসেবে এই প্রস্তাবনা আনা হচ্ছে। তবে, এই সংস্কারে চিন্তায় পড়তে পারেন কেয়ার হোমের নিয়োগকর্তারা, যারা কর্মী সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক নিয়োগের ওপর নির্ভরশীল।
কুপার বলেছেন, এই সংকট সমাধানে নতুনভাবে অভিবাসী নিয়োগের বদলে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগে মনোযোগ দেওয়া অথবা বিদ্যমান বিদেশি কর্মীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা উচিত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষ ভিসার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও, বিদেশে কর্মী নিয়োগের ওপর বাড়তি বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে সেবাখাতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যারা বর্তমানে কেয়ার ওয়ার্কার ভিসায় যুক্তরাজ্যে আছেন এবং ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির অপেক্ষা করছেন, তাদের জন্য ঘোষিত পরিকল্পনায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
প্রস্তাবনায় বিদেশি অপরাধীদের বিতাড়নের জন্য মূল্যায়নের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিদেশি শ্রমিক নির্ভরতা এবং অভ্যন্তরীণ দক্ষ কর্মীর অভাব মোকাবেলায় শ্রমবাজার প্রমাণীকরণ গোষ্ঠী গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই গোষ্ঠীতে শিল্প, দক্ষতা সংস্থা, সরকার এবং মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন, যারা বিদেশি কর্মীদের ওপর বিভিন্ন খাতের নির্ভরতা হ্রাস এবং দেশীয় দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করবেন।
ভিসার মেয়াদ
সংশোধিত প্রস্তাবনায়, নতুন বিদেশি কর্মী নিয়োগের বিকল্প হিসেবে বিদ্যমান কর্মীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, যোগ্যতার নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারলে তারা ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করতে পারবেন। এই মানদণ্ডের মধ্যে সাধারণত একটি উপযুক্ত কেয়ারের ভূমিকায় নিয়মিত কর্মসংস্থান এবং সেই সময়ে প্রযোজ্য বেতনসীমা বা অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা পূরণ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
আইএলআর
কর্মী ভিসা ধারকদের জন্য আইএলআরের বর্তমান নিয়মে একটি নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত ৫ বছর) একটানা বৈধভাবে বসবাসের প্রয়োজন হয়। যারা ইতোমধ্যেই এই ব্যবস্থায় রয়েছেন, তাদের জন্য আইএলআরের শর্তে কোনও স্পষ্ট পরিবর্তনের কথা বলা হয়নি। তাই, যারা আইএলআরের বর্তমান শর্ত পূরণ করেন, তারা প্রয়োজনীয় বসবাসের সময়সীমা পূর্ণ হওয়ার পরে আবেদন করতে পারবেন।
নিয়ম মেনে চলার গুরুত্ব বৃদ্ধি
নতুন করে বিদেশে কর্মী নিয়োগের ওপর সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিষেধাজ্ঞার কারণে, বিদ্যমান ভিসাধারী এবং তাদের নিয়োগকর্তারা ভিসার শর্তাবলি সম্পূর্ণরূপে মেনে চলছেন কিনা, সেটা যাচাইয়ে আরও বেশি জোর দেওয়া হতে পারে।
লন্ডনের চ্যান্সেরি সলিসিটর্সের কর্ণধার ব্যারিস্টার মো. ইকবাল হোসেন রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দ্রুত অভিবাসনের নিয়ম পরিবর্তন ব্রিটেনের অভিবাসন ব্যবস্থার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানকার অভিবাসন ব্যবস্থা বরাবরই ধারাবাহিক নয়। যারা অভিবাসী হিসেবে আসছেন, তারাই সমস্যায় পড়ছেন। গত তিন বছরে কর্মী, শিক্ষার্থী এবং স্পাউস ভিসায় কয়েক হাজার বাংলাদেশী ব্রিটেনে এসেছেন। তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।