তিন বছরের আলোচনা শেষে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ‘ঐতিহাসিক’ বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তি দুই দেশের অর্থনীতিকে নতুন গতি দেবে বলে আশা করছে উভয়পক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই চুক্তিকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য সরকার জানায়, এই চুক্তির ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বছরে ২ হাজার ৫৫০ কোটি পাউন্ড (৩৪ বিলিয়ন ডলার) পর্যন্ত বাড়বে এবং যুক্তরাজ্যের জিডিপি, বেতনসহ অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ৯০ শতাংশ শুল্ক লাইনে কর্তন আসবে, যার ৮৫ শতাংশ সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত হবে আগামী এক দশকের মধ্যে। যুক্তরাজ্যের হুইস্কি ও জিনসহ অ্যালকোহল শিল্প এবং গাড়িশিল্প এই চুক্তিতে সরাসরি লাভবান হবে। হুইস্কি ও জিনের ওপর শুল্ক প্রথমে ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে এবং দশ বছরের মধ্যে তা কমে দাঁড়াবে ৪০ শতাংশে। গাড়ির ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক কোটার ভিত্তিতে কমে হবে মাত্র ১০ শতাংশ।
এছাড়া, ব্রিটিশ প্রসাধনী, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, মহাকাশ যন্ত্রাংশ, ভেড়ার মাংস, স্যালমন মাছ, চকোলেট ও বিস্কুটের ওপর শুল্কও হ্রাস পাবে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই চুক্তির আওতায় ভারতের ৯৯ শতাংশ রফতানি পণ্যের ওপর আর কোনও আমদানি শুল্ক থাকবে না। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, এই চুক্তি আমাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার লক্ষ্যের আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এতে আমাদের স্বার্থ রক্ষা পেয়েছে এবং বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে ভারতের অংশগ্রহণের দরজা খুলেছে।
চুক্তির আওতায় একটি ‘ডাবল কন্ট্রিবিউশন কনভেনশন’ চালু হচ্ছে, যার ফলে ভারতীয় শ্রমিকেরা যুক্তরাজ্যে তিন বছর পর্যন্ত জাতীয় বিমা (ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স) প্রদানে ছাড় পাবেন এবং ব্রিটিশ কর্মীরাও ভারতে একই সুবিধা পাবেন।
চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে দুই দেশ একটি পৃথক বিনিয়োগ চুক্তি, শ্রম ও পরিবেশ সংক্রান্ত মানদণ্ড নিয়েও কাজ করছে।
মঙ্গলবার টেলিফোনে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এই উপলক্ষে মোদি তাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এক্স-এ মোদি লিখেছেন, এই ঐতিহাসিক চুক্তি আমাদের সামগ্রিক কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও গভীর করবে এবং উভয় দেশের অর্থনীতিতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও উদ্ভাবনে গতি আনবে।
স্টারমার বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনীতির সঙ্গে মিত্রতা জোরদার ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমানো আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনার অংশ।
ভারত এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্যের ২০২৭ সাল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া কার্বন ট্যাক্স থেকে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে মঙ্গলবারের ঘোষণায় এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করতে আগামী মাসগুলোতে দুই নেতা সরাসরি সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।