বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্রিটেনের ভিসার ফ্রি অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো সর্বোচ্চ ৮০০ পাউন্ডে বিক্রি হচ্ছে। রবিবার প্রকাশিত ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে যুক্তরাজ্যের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট দালালরা বিভিন্ন কৌশলে আগেই বুকিং করে রাখে। পরে তা উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যারা ছয় মাসের বেশি সময় যুক্তরাজ্যে থাকার জন্য ভিসার আবেদন করেন তাদের আঙ্গুলের ছাপ প্রদান এবং ছবি তোলার জন্য তাদের নিজ দেশে সশরীরে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্টে উপস্থিত থাকার নিয়ম রয়েছে। এ অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট সাধারণত ফ্রি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ পাউন্ড পরিশোধ করতে হয়। ভিএফএস গ্লোবাল নামের একটি কোম্পানি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের দায়িত্ব পালন করে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অংশে দালালরা এই বায়োমেট্রিক অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য ৮০০ পাউন্ড পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। ফেসবুক, টেলিগ্রামসহ সোশ্যাল ও মেসেজিং বিভিন্ন অ্যাপে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে কৌশলে স্লটগুলো বিক্রি করছে তারা। টাকা বেশি দিলে পরের দিনেই সাক্ষাৎকারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
পাকিস্তানে ভিসার স্লট বিক্রির ব্যবসা সবচেয়ে ভয়াবহ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে এজেন্টদের দিয়ে সিস্টেমের অপব্যবহার গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটি থেকে যুক্তরাজ্যের ভিসার জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিরা বলেছেন যে, বিধি সম্মতভাবে সাক্ষাৎকারের স্লট পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর দালালদের অর্থ প্রদান করা ছাড়া তাদের আর কোনও বিকল্প নেই।
বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিনিধিকে কেয়ার ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ও স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশে ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে স্লট বিক্রির বিষয়টি সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা নেই। ভিসা প্রসেসিং প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ত এই প্রতারণায় জড়িত থাকতে পারে।
সিলেট অঞ্চলের আইএলটিএস প্রশিক্ষক কাজী মাহফুজুর রহমান সোমবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, স্যোশাল মিডিয়ায় বা অন্য কোনও মাধ্যমে স্লট বিক্রির কোনও খবর তিনি শুনেননি। তবে, ভিসার কস পেপার আসার পর বা স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে আবেদনকারীরা বড় ধরনের বিপদে পড়েন।
বাড়তি জনবল নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশে ব্রিটেনের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যসহ ৭০টি দেশের সরকারের হয়ে কনস্যুলার সেবাপ্রদানকারী ভিএফএস গ্লোবাল জানিয়েছে, যে স্লটের কোনও অস্তিত্ব নেই সেটি বিক্রি করা দালাল বা ভুয়া আবেদনগুলো শনাক্তের চেষ্টা করছে। বটের ব্যবহার, অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল বা সময় পাল্টানো এবং ভুয়া সেবাগ্রহীতার বুকিং বাতিলের সক্ষমতা কমিয়ে আনার মতো উদ্যোগ তারা নিচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ফ্রি অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো ‘আগে আসলে, আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ইস্যু করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ স্থানে এটি পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা নেই। ব্যতিক্রম পাকিস্তান।