দেশে ফেরার উদ্দেশে তারেক রহমানের বাসা থেকে বের হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সোমবার স্থানীয় সময় ২টা ১০ মিনিটে তিনি বাসা থেকে বের হন বলে জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।
এছাড়া সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিএনপি মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া ঢাকার উদ্দেশে লন্ডনের বাসা থেকে বের হয়েছেন। তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে গাড়ি চালিয়ে মাকে বিমানবন্দর নিয়ে যাচ্ছেন।
খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে সোমবার সকাল থেকেই লন্ডনে জড়ো হতে থাকেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা। হিথ্রো বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে দেখা হবে না জেনেও তারা আসেন। সোমবার ব্যাংক হলিডে বা সরকারি ছুটির দিন ও কিছুটা বিরূপ আবহাওয়া থাকলেও সব উপেক্ষা করেই খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে জমায়েত হতে থাকেন তারা।
সফরসূচি বারবার পরিবর্তন ও ফ্লাইট নিয়ে সর্বশেষ যা জানা গেলো
গত ঈদুল ফিতরের পর থেকেই দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যখন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে আনা হয়, তখনই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল যে কাতার তাদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে খালেদা জিয়ার বাংলাদেশে ফেরার ব্যবস্থা করবে। সে অনুযায়ী কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমেও যোগাযোগ করে বিএনপি। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে ফিরতি ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য পাচ্ছিল না জিয়া পরিবার।
লন্ডনে খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত একাধিক সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন, আজ সোমবার মধ্যরাতে খালেদা জিয়ার লন্ডনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এ কারণে বিমানের ফ্লাইটেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে দেশে ফিরতে লন্ডনে আসেন খালেদা জিয়ার অন্য দুই চিকিৎসক ও বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল।
অন্যদিকে, বিমানের ফ্লাইট বুকিংসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্নের পর লন্ডনের কাতার দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতে পেরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে ফোন করেন। তার কাছে থেকে খালেদা জিয়ার ভিসার মেয়াদের বিষয়টি বিস্তারিত জানার পর বিশ মিনিটের মধ্যে ওই কর্মকর্তা কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সময়সূচি ও বিস্তারিত তথ্য পৌঁছে দেন।
আগের দিন রবিবার কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে আসা চিকিৎসক দল ও লন্ডনের চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
সূত্রগুলো আরও জানায়, কাতারের অত্যাধুনিক এই সুপরিসর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মোট ২৫ জনের ধারণক্ষমতা রেখে আসন বিন্যাস করা হয়েছে। শুরুতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১০ সফরসঙ্গী ফেরার কথা থাকলেও দেশ থেকে আসা অন্য তিনজনসহ মোট ১৪ জন আজ দেশের পথে যাত্রা করবেন।
এদিকে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খালেদা জিয়া তারেক রহমানের কিংস্টনের বাসায় অবস্থান করছিলেন।
যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমেদ শাহীন স্থানীয় সময় দুপুর একটা দশ মিনিটে জানান, ম্যাডামকে বিদায় জানাতে আমরা হিথ্রো বিমানবন্দরের পাশে রয়্যাল স্যুটের সামনে জড়ো হচ্ছি। এখানে হাজারের বেশি নেতাকর্মী জড়ো হবেন। তারেক রহমান নিজে গাড়ি চালিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে যাবেন খালেদা জিয়াকে। ম্যাডাম এখানে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের বিদায় সংবর্ধনার জবাব দেবেন। লন্ডন সময় বিকাল চারটা পনেরো মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবার কথা ম্যাডামের।
হিথ্রো বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে উপস্থিত নসরুল্লাহ খান জুনায়েদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। জুনায়েদ বলেন, “দোয়া করি, ম্যাডাম যেন আবার চিকিৎসা নিতে লন্ডনে আসেন। তিনি যেন বহু দিন আমাদের অভিভাবক হয়ে থাকেন। তিনি যখন বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে আসেন তখন দেশের নেতাকর্মীদের প্রার্থনা ছিল ম্যাডাম সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন। আজ ম্যাডাম ফিরে যাচ্ছেন, দোয়া করি শারীরিক চেকআপে বা রাষ্ট্রীয় কোনও প্রয়োজনে তিনি লন্ডনে আসবেন, এখানেই ওনার সাথে দেখা হবে।'
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর লন্ডন থেকে প্রথম কোনও বিএনপি নেতা হিসেবে খালেদা জিয়াকে দেখতে দেশে হাসপাতাল অবধি গিয়েছিলেন নব্বইয়ের গণআন্দোলনে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম নেতা ও লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এলএসসিআইর চেয়ারম্যান জুনায়েদ।