ম্যালেরিয়াতে মৃত্যু কমলেও ঝুঁকি রয়েছে!



মশা২০১৫ সালে দেশে মোট ৩৯ হাজার ৭১৯ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়। চিকিৎসাও হয় তাদের। এর মধ্যে পাঁচ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ৭০৮ জন। ২০০৮ সালের তুলনায় এ সংখ্য শতকরা ৫৩ ভাগ এবং মৃত্যুর হার ৯৪ ভাগ কম। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন,ম্যালেরিয়াতে মৃত্যুর হার কম হলেও এর ঝুঁকি কমেনি। যদিও জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনাতে রয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।
ঝুঁকি থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা পার্শ্ববর্তী এবং সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এবং ওষুধের অকার্যকারিতা, দক্ষ জনশক্তির স্বল্পতা,পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন গোত্রভেদে ভাষাগত জটিলতা,জলবায়ু পরিবর্তন, মশার প্রজাতিসহ নানা বিষয়কে দায়ী করছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী,২০১৫ সালে ম্যালেরিয়ার কারণে প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ অসুস্থ এবং ৪ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যার অধিকাংশই পাঁচ বছরের নিচে। সংখ্যার হিসেবে মোট ৩ লাখ ৬ হাজার শিশু। অপরদিকে যেসব সংক্রামক রোগের কারণে বিশ্বে বেশি মৃত্যু হয় তার মধ্যে ম্যালেরিয়ার স্থান পঞ্চম। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় এক দশমিক পাঁচ শতাংশ মানুষ বাংলাদেশের।
ম্যালেরিয়া বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১৩ জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। যেখানে প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। এই ১৩ জেলায় প্রতিবছর ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত এবং মৃত্যুর প্রায় শতকরা ৯৮ শতাংশ।

আরও পড়ুন: বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহতদের ৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল

জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনা থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার জনগোষ্ঠী ম্যালেরিয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে,২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুর হার অনেক কম। ২০১৪ সালে যেখানে মৃত্যুর হার ছিল ৪৫ জন, সেখানে ২০১৫ সালে তা কমে ৯ জনে নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে কমে এসেছে ম্যালেরিয়ার আক্রান্তের হার। ২০১৪ সালে আক্রান্তের হার ছিল ৫৭ হাজার ৪৮০ জন, ২০১৫ সালে তা কমে ৩৯ হাজার ৭১৯ জনে নেমে এসেছে।
ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মনিটরিং ও মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন,আমাদের স্বপ্ন ম্যালেরিয়ামুক্ত বাংলাদেশ ।২০১৮ সালের মধ্যে দেশে ১৩ টি ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলায় এর প্রকোপ পর্যায়ক্রমে ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনা আমাদের লক্ষ্য। একই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি সংগঠন ব্রাকের নেতৃত্বে ২১টি এনজিওর একটি কনসোর্টিয়াম সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে নাক না গলানোর আহ্বান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর

অপরদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার দেহে পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাই ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি একেবারে কমছে না। তবে সরকারি-বেসরকারি কার্যকর উদ্যোগে আশা করছি ২০৩০ সালের আগেই ম্যালেরিয়া অনেকটাই নির্মূল হবে।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটার কথা জানালেন ব্রাকের যক্ষা ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ড. আকরামুল ইসলাম। তিনি বলেন,এসব কারণে দেশে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি এখনো কমেনি।
/এমএসএম/ আপ-এমও