বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন হল, হোটেল ইন্টারকন্টিনেটালের অপর দিকে। বিএসএমএমইউয়ের টিকাদান কর্মসূচি চলছে এখানেই। গত ৭ দিন ধরে দেশে চালু হওয়া করোনা টিকাদান কর্মসূচিতে এই কেন্দ্রেই সবচেয়ে বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন।
ভবনটি নতুন বলে এখনও চারিদিক ঝকঝকে। ব্যবস্থাপনাও ভালো, অন্তত যারা টিকা নিয়েছেন এখানে তারাই বলছেন এ কথা। এখানে রয়েছে টিকা দেবার জন্য ৮টি বুথ।
সেরকম একটি বুথেই টিকা নিলেন গোপীবাগ থেকে আসা নুরুন নাহার বেগম, বয়স ৭৩। হাড় ক্ষয়ের সমস্যার কারণে গত ১৬ বছর ধরেই হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা তার। ডায়াবেটিস-উচ্চরক্তচাপ সবই রয়েছে। তবে সেসবই কন্ট্রোলে তার।
মা নুরুন নাহার বেগমকে নিয়ে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ মোহাম্মদ তৌহিদ। তিনি বলেন, মায়ের যে বয়স, রয়েছে অন্যান্য সমস্যাও। তাই অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, সেজন্যই টিকা দিয়ে নিলাম। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, কিন্তু আমার পরিচিত কারও কোনও সিভিয়ার সমস্যার কথা শুনিনি, আসলে হয়নি। তাই মাকে টিকা দিতে নিয়ে এলাম।
এত কষ্ট করে কেন টিকা দিতে এলেন জানতে চাইলে নুরুন নাহার বলেন, ছোটবেলায় ছেলেমেয়েদের টিকা দিয়েছিলাম তাদেরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য, এবার আমি নিলাম-সেটাও সুরক্ষিত থাকার জন্য। কতদিন ধরেইতো টিকা নিয়ে কত কথা শুনছি। কিন্তু আমি সবাইকে বলতে চাই, আমি এই বয়সে হুইল চেয়ারে করে বসে টিকা নিতে এসেসি সবাই মিলে সুরক্ষিত থাকার জন্য।
কারও সুযোগ থাকলে কেউ যেন টিকা নিতে অবহেলা করবেন না, সবাই মিলে টিকা নিলে সবাই মিলেই সুরক্ষিত থাকবো-আর এটাই করোনা থেকে বাঁচার অন্যতম পথ। তবে সেই সঙ্গে মাস্ক পরা থেকে শুরু করে মানতে হবে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি।
টিকা নেওয়ার সময় কোনও অসুবিধা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে নুরুন নাহার বেগম বলেন, একদমই টের পাইনি, টিকা দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ মিনিট পার হয়ে গেল, কিন্তু সব স্বাভাবিক, কিছুই মনে হচ্ছে না।
৭৭ বছরের মোহাম্মদ আবুল হাসেম আর ৭৩ বছরের রোকেয়া বেগমকে নিয়ে এসেছেন ছেলে শিবলি নোমান।
তিনি বলেন, অনেক আলোচনা হয়েছে টিকা নিয়ে। এখন আর ভয় নেই, টিকা দেওয়াটাই এখন প্রধান কাজ। আর টিকা দেবার পর মানসিকভাবে বলিয়ান হবো-এটাই এখন মোদ্দা কথা।
এই সেন্টারে টিকা নিতে এসেছেন আরও অনেকেই। তারা বলছেন, টিকা নিয়ে প্রথম দিকে একটু ভয় কাজ করছিল, কিন্তু যখন দেখছি সবাই নিচ্ছে, তখন আর ভয় রেখে কী হবে। এখন যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। আর সবাই মিলে যদি সুরক্ষিত থাকি তাহলেই আমরা রক্ষা পাবো-বলছেন তারা।