কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে স্বামী আবদুর রহমানকে নিয়ে রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসির করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আসেন সিরাজগঞ্জের বিবি আমেনা। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত হাসপাতালের সামনেই অ্যাম্বুলেন্সে বসে থাকেন অসুস্থ স্বামীসহ। অক্সিজেনের জন্য ছটফট করতে করতে নিথর হয়ে পড়েন স্বামী। অনেক ডেকেও পাননি ডাক্তার বা নার্স। ৪০ মিনিট পর অক্সিমিটার হাতে এগিয়ে আসেন এক আয়া। কিন্তু ফল জানাতে পারেননি তিনি। কেটে যায় আরও ৪০ মিনিট। দেড়টার পর একটি স্ট্রেচার এসে দাঁড়ায় অ্যাম্বুলেন্সটির সামনে। ততক্ষণে একেবারেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন আবদুর রহমান। জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর আমেনা বেগম জানতে পারেন তার স্বামী মারা গেছেন।
আমেনা বেগম জানান, স্বামীর শ্বাসকষ্ট দেখে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যান। আইসিইউর প্রয়োজন হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দেয়। পরে নিয়ে আসেন ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে। সেখানে দেড়ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ডাক্তারের দেখা পাননি। আসেনি কোনও কর্মচারীও। আমেনা বলেন, ‘আমার স্বামী বেঁচে ছিল, নাকি ততক্ষণে মরে গেছে সেটাও কেউ বলেনি। কেউ কথাই বলতে চায় না। একজন ডাক্তারও আসে না। যাবো কার কাছে!’
এ সময় আরও চারটি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সেই ছিল গুরুতর রোগী। রোগী আসার পর হাসপাতালের কেউ এগিয়ে আসে না। এতে স্বজনদের মধ্যে দেখা দেয় দিশেহারা ভাব। অনেক রোগী নিজেই জরুরি বিভাগের দিকে হাঁটা দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অ্যাম্বুলেন্স চালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই হাসপাতালের অবস্থা এমনই। প্রতিদিন রোগী আসে, অ্যাম্বুলেন্স থেকে হাসপাতালে নেওয়ার লোক থাকে না। থাকলেও তারা নামায় না। রোগীর লোকজনই রোগীকে ভেতরে নিয়ে যায়। আমরাও অনেক সময় রোগীদের ধরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।’
তিনি আরও জানান, ‘আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগী রয়েছেন ৫৬৪ জন। এদের মধ্যে ১১২ জন আইসিইউতে এবং ২৮৮ জন এসডিইউতে রয়েছেন। সাধারণ বেডে আছেন ৫৪ জন। গতকালই ৬৯ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ছাড়া পেয়েছেন ৪০ জন।’