মঙ্গলবার সকালে আত্মহত্যার আগে প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনক ও তার ছোট ভাই প্রত্যয়কে দায়ী করে একটি ভিডিও আপলোড করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সাবিরা।
রূপনগর থানার ওসি শহিদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রূপনগরের ১২ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় নিজ ফ্ল্যাটে মডেল সাবিরা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর আগে গলায় ও পেটে ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। সেই ভিডিও ক্লিপটিও তিনি নিজেই ফেসবুকে আপলোড করেন। এরপরই তিনি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
মৃত্যুর আগে সাবিরা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমি ব্যর্থ, আপাতত। ওকে নেক্সট অ্যাটেম্প নেব।’
প্রেমিক নির্ঝরের উদ্দেশে সাবিরা বলেন, ‘আমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি না। এটা তোমার ছোট ভাইকে বলা। সে আমাকে যা ইচ্ছে বলেছে। আর বেস্ট পার্ট হলো, প্রত্যয় আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আর আমার প্রশ্ন হলো, তোমার কি একটুও ফিল হয়নি?’ আর শেষে নির্ঝরকে ট্যাগ করে লেখেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য সে দায়ী। যদি আমি মারা যাই, তাহলে এর দায় তার।’ এছাড়া মৃত্যুর আগে আপলোড করা প্রায় ৯ মিনিটের ওই ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যায়, তিনি ছুরি হাতে নিয়ে একাধিকবার পেটে ও গলায় চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন।
সাবিরা বেশ কিছু পণ্যের স্থিরচিত্রে মডেল হয়েছিলেন। মডেলিং ছাড়াও উপস্থাপনাতেও তাকে দেখা গেছে। এছাড়া তিনি গানবাংলা টিভিতে কাজ করতেন। বিষয়টি নিয়ে সকালে গানবাংলা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনক ফ্রিল্যান্সার ফটোগ্রাফার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবিরার মামা রূপনগর থানায় বসে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মডেল সাবিরা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে ছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছদ হয়। বাবা দুবাই প্রবাসী। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়লেও তিনি লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি। রাজধানীর শেখেরটেকের বাড়িতে তিনি মায়ের সঙ্গে থাকতেন। প্রথম কয়েকবছর তার বাবা মনির হোসাইন মেয়ের ভরণ-পোষণের টাকা দিলেও পরে বন্ধ করে দেন। সাবিরার মডেলিং নিয়ে তাদের পরিবারের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। পাঁচ-ছয় মাস আগে এ নিয়ে তাদের পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর তিনি রওনকের সঙ্গে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রূপনগরের ১২ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাসা ভাড়া নেন। বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন পুলিশকে এমনটিই জানিয়েছেন। রওনক ওই বাসায় যাওয়া আসা করতেন।
পুলিশ জানায়, শেষ রাতের দিকে ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড দেওয়ার পর সাবিরার প্রেমিক রওনক ভোরে ওই বাসায় চলে আসেন। এরপর ভেতর থেকে দরজা লাগানো দেখে তিনি বিষয়টি বাড়িওয়ালাকে জানান। বাড়িওয়ালা ফ্ল্যাটে গিয়ে পুলিশকে খবর দেন। রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন গিয়ে দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইমদাদুল হুদা ও মহসীন আলীর উপস্থিতিতে এসআই আলমগীর হোসেন নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন।
এসআই জানান, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় সাবিরার দেহ ঝুলতেছিল। তাকে দ্রুত নামানো হয়। কিন্তু অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালে সাবিরার আরেক মামা মর্তুজা কাদির জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। তিনিও এর কারণ বুঝতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: তরুণ মডেলের আত্মহত্যা!
এমআরআর/জেইউ/এআরআর/এম/এজে