পুলিশ সদর দফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। পুলিশ সদস্য আক্রমণের স্বীকার হলেও তাদের পরিবার কখনও টার্গেট হয়নি। কিন্তু এবার সেটা হয়েছে। পুলিশ তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেবে।
পুলিশের উপ-মহাপরিদরশক (ডিআইজি) একেএম শহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেকোনও অপরাধের বিষয়ে পুলিশ জিরো টলারেন্স। পুলিশকে সেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরে মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকের নেতৃত্বে সার্বিক বিষয়ে একটি সভা হয়েছে। সেখানে এসব বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে আইজিপি।
অভিযানে র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা যৌথভাবে অংশ নেবে। সারাদেশে এই অভিযান চলবে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা।
গত রবিবার চট্টগ্রামের জিওসি মোড়ে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেন দুর্বৃত্তরা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার বলেন, ‘কোনও সম্ভাবনাকেই আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। জঙ্গি, উগ্রপন্থী বিভিন্ন অপরাধীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এসপি বাবুল আক্তার। সে জন্য সব বিষয়কে সামনে রেখে কাজ করছি। তবে তদন্তে এখন পর্যন্ত বলার মতো কিছু নেই।’
এদিকে, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম মনে করেন, বিদেশি মদদে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়েছে।
এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যা ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ওপর করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠকে অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, রেলওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি মো. আবুল কাশেম, ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, সকল কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং ঢাকা, টাংগাইল, গাজীপুর, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, বগুড়া, ঝিনাইদহ ও নাটোর জেলার পুলিশ সুপাররা উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণা জোরদার করতে হবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য কমিউনিটি পুলিশিংকে কাজে লাগাতে হবে।
আইজিপি এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুনের ঘটনাকে অত্যন্ত নির্মম বর্বরোচিত ও দুঃখজনক ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন।
আইজিপি দৃঢ় মনোবল নিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, টিম স্পিরিট নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সভায় দেশব্যাপী জঙ্গিদের তালিকা হালনাগাদ করা, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি বাড়ানো, ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিংকে কার্যকর করা, আগন্তক ও ভাড়াটিয়াদের ওপর নজরদারি বাড়ানো, বিদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভার শুরুতে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আরও পড়তে পারেন: এসপির স্ত্রী হত্যা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র: পুলিশ
/এএইচ/এমএনএইচ/