টিকেট কেটে পুরনো কারাগারে যা দেখবেন

 

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কে শুরু হয়েছে ‘সংগ্রামী জীবনগাথা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার দুর্লভ ১৪৫টি আলোকচিত্র প্রদর্শিত হবে এতে।  মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) উদ্বোধন হওয়া পাঁচদিনের এই প্রদর্শনী চলবে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এ উপলক্ষে ২২৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কারাগার অভ্যন্তরে সাধারণ জনগণ প্রবেশের সুযোগ পাবে। ১০০টাকার টিকেটের বিনিময়ে দুর্লভ আলোকচিত্রের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ও চার নেতার জাদুঘর দেখা সুযোগ পাওয়া যাবে। এছাড়া কারাগারের বেশ কিছু স্থাপনা ও বন্দিদের সেল দেখার সুযোগ পাবেন আগত দর্শনার্থীরা। মূল ফটকের পাশেই রয়েছে টিকিট কাউন্টার।

 

দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনীকারাগারের প্রধান ফটকে প্রবেশের পরই হাতের ডান পাশে রয়েছে আমতলা। এর টিনশেড ঘরগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ১৪৫টি দুর্লভ আলোকচিত্র। এরপর কিছুদূর এগিয়ে রাস্তার শেষ মাথায় গিয়ে হাতের বামে গেলে দেখা মিলবে বিদেশি বন্দিদের ওয়ার্ড ‘নীল নদ’। এই ওয়ার্ডে বাংলাদেশে গ্রেফতারকৃত বিদেশি কারাবন্দিদের রাখা হতো।

বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চেয়ার

নীল নদ দেখে আরও সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরের ফটক। প্রবেশের আগে হাতের ডানপাশে রয়েছে একটা স্তম্ভ। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পর লাশ হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত এই স্থানে চারজনের লাশ রাখা হয়েছিল।

চার নেতার জাদুঘরে প্রবেশের পর চোখে পড়বে একটি বাগান। এর ডানপাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ম্যুরাল। এরপর সোজা সামনে গেলেই রয়েছে মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ স্মৃতি কক্ষ নামে চার নেতার স্মৃতি বিজড়িত সেল। এতে তাদের ব্যবহার করা বিভিন্ন উপকরণ সংরক্ষণ করা হয়েছে।

তাজউদ্দিন আহমদ ও মনসুর আলীর ম্যুরাল

কারা অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতার কারা স্মৃতি জাদুঘর দর্শন শেষে বেরিয়ে আসার পর একটি রাস্তা গেছে তিনটি ওয়ার্ড সম্পন্ন ‘যমুনা ভবন’ নামে একটি সেলের দিকে। এটার প্রথম দুটি ওয়ার্ড হলো আমদানি ওয়ার্ড। অর্থাৎ নতুন যে সব আসামিকে কারাগারে আনা হতো, তাদের এই দুই ওয়ার্ডে রাখা হতো। তৃতীয় ওয়ার্ডে রাখা হতো জেনারেল আসামিদের।

লাশ হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত চার নেতাকে এই স্থানে রাখা হয়েছিল

যমুনা ভবনের ঠিক বিপরীত পাশে রয়েছে মেঘনা ভবন। যা দূর থেকে দেখতে হবে। মেঘনা ভবনটি ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা স্থাপনগুলোর একটি। যমুনা ভবনের পাশেই রয়েছে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘর’। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রয়েছে সুসজ্জিত বাগান। বাগানে রয়েছে ৬০ দশকে কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তার স্বহস্তে লাগানো কামিনী গাছ। আরও রয়েছে বঙ্গবন্ধুর একটি বিশাল ম্যুরাল। এছাড়া তাকে যে সেলে রাখা হয়েছিল, সেটাও সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেলের ভেতরে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত চেয়ার-টেবিল, খাবার প্লেট, বিছানাপত্র, হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা জিনিস।

বিদেশীদের রাখা হতো এই সেলে

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান জানান, ‘প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পুরনো কারাগার সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তিনটি সেশনে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা প্রথম, দুপুর ১টা থেকে ৩টা দ্বিতীয় ও সাড়ে ৩টা  থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তৃতীয় সেশনে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবে। প্রতিজন হিসেবে টিকেটমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০টাকা। প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সাবেক প্রতিনিধি ইমিরেটাস প্রফেসর ড. এ কে আব্দুল মোমেন। টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ নতুন কারাগারে মহিলা বন্দিদের সন্তানদের জন্য খেলাধুলার সামগ্রী ক্রয়ে ব্যয় করা হবে।’

 

মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ স্মৃতি কক্ষউল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পুরনো কারাগারকে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিনোদন কেন্দ্র তৈরির পাশাপাশি কারা অভ্যন্তরের ঐতিহাসিক ভবনগুলো সংরক্ষণ করবে কারা কর্তৃপক্ষ। বিনোদনের জন্য পার্ক, জাদুঘর, উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চসহ থাকবে নানা আয়োজন। এছাড়া সম্প্রতি টাকা বিনিময়ে জেলের স্বাদ সাধারণ জনগণকে দেওয়ার জন্য ‘ফিল দ্য প্রিজন’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা করছে কারা কর্তৃপক্ষ। পুরনো কারাগারকে নতুন রূপে সাজাতে অন্তত আরও ৩-৪ বছর সময় লাগবে বলে জানা গেছে।

/এমএনএইচ/