ফ্লাইওভারের নিচেই নতুন বাজার!







যানজট নিরসনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। কোথাও কোথাও যানজট নিরসন হলেও ফ্লাইওভারের নিচে তৈরি হয়েছে নতুন জনজট। সরেজমিন ওইসব স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ফ্লাইওভারের নিচেই গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকান। কংক্রিটের ব্যারিকেড ভেঙ্গেও এমন দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব দোকানে প্রকাশ্যেই চলছে চাঁদাবাজী।15233658_10205661121247058_337624918_o


সোমবার সকালে গুলিস্তান ফ্লাইওভারের সেক্রেটারিয়েট অংশে গিয়ে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের নিচেই সারিসারি জুতার দোকান, খাবার হোটেল ও চায়ের দোকান। এছাড়াও সেখানে রাখা হয়েছে ১৯টি ঘোড়া। ফ্লাইওভারের নিচে কংক্রিটের ব্যারিকেড দেওয়া অংশটি কোথাও কোথাও ভেঙ্গে গেছে। সেখানে ১৩টি খাবার হোটেল খোলা হয়েছে, যার মধ্যে তিন-চারটি বন্ধ পাওয়া গেছে। সড়কের দুইপাশের গাড়ি চলাচলের মধ্যেই মানুষ এসব দোকানে প্রবেশ করছে।
ফ্লাইওভারের নিচেই হোটেল চালাচ্ছেন মধ্যবয়সী হারুন। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হোটেল ব্যবসা করে আসছেন। পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের টাকা দিয়ে এই ব্যবসা করছেন তিনি।
বাংলা ট্রিবিউনকে হারুন বলেন, ‘এখানে দোকান করতে প্রতিদিন ৩৫০ টাকা করে বিভিন্নজনকে ভাগ করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। বাচ্চু নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে প্রতিদিন ১০০ টাকা দিতে হয়। ইনু নামে এক যুবক তার পক্ষে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে মালেক। তাকেও প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিতে হয়। পুলিশের নামে তিনভাগে চাঁদা দিতে হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার নামে জাকির প্রতিদিন ২৫ টাকা করে নেয়। সে বাইসাইকেলে আসে। বংশাল থানা ৫০ টাকা এবং স্থানীয় ফাড়ি পুলিশ ১০ টাকা নেয়।’15205669_10205661121367061_1048966361_o
হারুনের সঙ্গে কথা বলার সময় মালেক চাঁদা তুলতে আসেন। তাকে দশ টাকা চাঁদা দেয় হারুন। মালেকের মাথায় সাদা টুপি পরা ছিল। মালেক টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার পর হারুন বলেন, ‘একটু পর আবার ফাও খেতে চলে আসবে। না দিলে সব খাবার ফেলে দেবে।’ এভাবেই দোকান চালাচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে মালেকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে চলে যান। তবে তার চাঁদা নেওয়ার দৃশ্য ধরা পরে মোবাইলের ক্যামেরায়।
অপরদিকে সেক্রেটারিয়েট সড়কের ফ্লাইওভারের অংশের নিচে ঘোড়া লালন পালন করায় এবং ঘোড়ার গাড়ি রাখায় সড়কটি আরও সরু হয়ে আছে। এতে পলাশী বাজার এলাকা থেকে গুলিস্তানের দিকে গাড়ি প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
তবে ঘোড়ার গাড়ির মালিক ও শ্রমিকরা বলছেন, তারা বৃটিশ আমল থেকে এখানেই আছেন। তারা একটি ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। জায়গা না পেয়ে এখনও ফ্লাইওভারের নিচের এই খালি জায়গায় ঘোড়া রাখছেন। তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে জায়গা চেয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও জায়গা দিতে পারেনি।15271443_10205661121127055_1874237887_o
এছাড়াও গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচে সারিসারি জুতার দোকানে ভরে গেছে। ব্যস্ত সড়কের মধ্যে দাড়িয়ে এসব দোকানে জুতা দেখেন পথচারীরা।
চাঁদার বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কোনও হোটেল থেকে চাঁদা নিই না। বিষয়টি সত্য না।’
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে সরেজমিনে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের নিচে কোনও যানজট নেই। তবে মাছ ও মুরগী বিক্রেতারা দখল করে নিয়েছে ঠিক ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা। ভোরে সখোনে রীতিমতো বাজার বসছে। সেখানে ভীড়ও থাকে খুব। বড় ঝুড়িতে করে মুরগি নিয়ে আসেন বেপারিরা। এরপর দিনভর সেখানে থেকে মুরগি বিক্রি করেন তারা। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচেও একই চিত্র দেখা গেছে। ভোরের দিকে সেখানেও বসে বাজার।
/এসএ/আপ-এআর/