ফেসবুকে বিদেশি সেজে দামি উপহারের প্রলোভন, গ্রেফতার ৩

rab 2বিদেশি নাগরিকের নাম-ঠিকানা এবং শ্বেতাঙ্গ কোনও ব্যক্তির ছবি দিয়ে সাজানো ফেসবুকে ভুয়া আইডি তৈরি করে কৌশলে বিপুল পরিমাণের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। এক্ষেত্রে তারা দেশীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, কথা বলে ইংরেজিতে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রতারকরা কিছুদিন সময় নিয়ে উপহার সামগ্রী পাঠাবে বলে কথা দেয়। এই ফাঁদে পড়লেই চলে যাচ্ছে প্রচুর অর্থ।

অভিনব এই প্রতারণার কারণে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত খুইয়েছেন অনেকে। বুধবার (২২ মার্চ) রাতে এমন একটি প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-২। গ্রেফতারকৃতরা হলো- আফজাল আহম্মেদ (৩৩), শরীফ আলমগীর (৪৫), শরীফুল আহম্মেদ ওরফে মোহন (২৩)।

র‌্যাব-২-এর সহকারী পরিচালক ফিরোজ কাউছার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আরও কয়েকটি প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের সঙ্গে বিদেশি কিছু নাগরিকও জড়িত। তাদের বিষয়েও বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিচ্ছি আমরা। এছাড়া এই তিনজনের সঙ্গে দেশীয় আরও লোকজনের যোগসাজস আছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।’

গত ১৫ মার্চ এক ব্যক্তি র‌্যাব-২-এর সিপিসি-৩ ক্যাম্পে একটি অভিযোগ করেন বলে জানা গেছে। ওই অভিযোগে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রচুর অর্থ হারানোর বিবরণ দিয়েছেন। র‌্যাব কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনকে ঘটনাটি জানিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে ফেসবুকে থমসন স্মিথ নামে স্কটিশ ব্যক্তির সঙ্গে অভিযোগকারী ব্যক্তির পরিচয় হয়। এরপর চলতে থাকে তাদের কথোপকথন। ফেসবুক ছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপেও কথা হয় উভয়ের। একপর্যায়ে থমসন নামধারী ওই প্রতারক স্কটল্যান্ড থেকে কিছু উপহার সামগ্রী পাঠাবে বলে জানায়। এটা সরল মনে বিশ্বাস করেন ওই ব্যক্তি।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ মার্চ মিনরো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগকারীর কাছে ফোন করা হয়। বলা হয়, তার নামে একটি গিফট বক্স এসেছে। কিন্তু পরিবহন ব্যয় হিসেবে ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। অভিযোগকারী ওই ব্যক্তি ৪০ হাজার টাকা দেন প্রতারকদের হাতে। পরবর্তীতে কর পরিশোধের নামে আরও ৯৭ হাজার ১৯৯ টাকা চাওয়া হয় তার কাছে। সেই টাকাও পরিশোধ করেন তিনি। এই টাকা হাতে পেয়ে প্রতারক চক্র জানায়, এন্টি টেরোরিজম এবং মানি-লন্ডারিং থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহের জন্য আরও ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে গত ১৪ মার্চ এই টাকাও পরিশোধ করেন তিনি।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, প্রতারক চক্র সহজেই টাকা পেয়ে আরও টাকা নেওয়ার ফন্দি আঁটে। এবার অভিযোগকারী ব্যক্তির কাছে গিফট বক্স স্ক্যান করে মূল্যবান সামগ্রী থাকার কথা জানিয়ে ক্লিয়ারেন্সের নামে আরও ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫০ টাকা চাওয়া হয়। তখন টনক নড়ে তার। প্রতারক চক্রের কাছে গিফট বক্সের অবস্থান জানতে চাইলে টালবাহানা শুরু করে তারা। অবশেষে প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি বুঝতে বাকি থাকে না তার। এরপর তিনি বিষয়টি লিখিতভাবে জানান র‌্যাব-২-এ।

র‌্যাব সূত্র জানায়, অভিযোগকারী ব্যক্তি একজন ব্যবসায়ী। ফেসবুকে প্রলোভনে পড়ে প্রতারণার শিকার হওয়ায় তিনি লজ্জিত। এ কারণে নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। র‌্যাব-২-এর কর্মকর্তা ফিরোজ কাউসার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত তিন ব্যক্তি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। এই কাজে আরও ৫-৭ জন জড়িত বলে তারা স্বীকার করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে তারা। এক্ষেত্রে ফেসবুকের পাশাপাশি ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেছে চক্রটি। লক্ষ্য ঠিক করা ব্যক্তির কাছে নিজেদের আমেরিকা, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড অথবা ইউরোপের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেয় তারা। এ চক্রের সঙ্গে কয়েকজন নারী সদস্যও রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতারকরা।

/জেএইচ/টিএন/

আপ: /এসএ/