হেফাজতের ফুট সোলজারদের খুঁজছে পুলিশ: মনিরুল ইসলাম

 

মনিরুল ইসলাম২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার পর যেসব মামলা হয়েছে, সেসব মামলা জটিল প্রকৃতির বলে মন্তব্য করেছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার পর যে মামলা হয়েছে, তাতে শতশত মানুষের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তা জটিল প্রকৃতির। তাই এই মামলায় জড়িত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে নিষ্পত্তি করতে বিলম্ব হচ্ছে। এই নাশকতার সঙ্গে জড়িত নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করা গেলেও হেফাজতের ‘ফুট সোলজারদের’ চিহ্নিত করা যায়নি।’’ মঙ্গলবার সকালে ডিএমপি কার্যালয়ে হেফাজতের নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অগ্রতি জানানোর সময় তিনি এসব কথা বলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিন এলাকার কয়েকটি থানায় বেশ কিছু মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেদিন অনেক ঘটনা ঘটেছিল। সে জন্য প্রত্যেকটি আলাদা ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিছু মামলায় পুলিশ বাদী হয়েছে, কয়েকটি মামলায় ভিকটিমও বাদী হয়েছে। চল্লিশের বেশি মামলা রুজু হয়েছিল। তার ভেতর থেকে ইতোমধ্যে কিছু মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ মামলাই এখন পর্যন্ত তদন্তাধীন।’

সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখানে (মতিঝিল) প্রচুর মানুষের আগমন ঘটেছিল। সেক্ষেত্রে এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে কোন ঘটনাটি ঠিক কারা সংঘটিত হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে তার তথ্য সংগ্রহ করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।  যে মামলাগুলো একটু জটিল প্রকৃতির অর্থাৎ যেখানে শতশত মানুষ অংশগ্রহণ করেছে, সেসব ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল, তা জানতে সময় প্রয়োজন। যেহেতু সারাদেশ থেকেই মানুষ এসেছিল, তাদের পরিচিতি খুঁজে বের করা, পরিচিতি খুঁজে বের করে আবার প্রত্যেকের আলাদা আলাদা দায় কী ছিলী, সমষ্টিগত দায় কী ছিল, সেগুলো বের করতে সময় লাগছে। এজন্য সব মামলা এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি করা যায়নি। কিছু কিছু মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকিগুলো তদন্তাধীন।’

ওই ঘটনায় নিহত এসআই শাহজাহান হত্যা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন,  ‘এসআই শাহজাহা‌ন হত্যা মামলাও তদন্তা‌ধীন র‌য়ে‌ছে। একজন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছ। তার জবানবন্দিতে বেশকিছু সংগঠনের নেতার নাম এসেছে। তা যাচাই-বাছাই চলছে। এর বাইরেও নির্দেশনা যারা দিয়েছে, তাদেরও কারও কারও নাম এসেছে। কিন্তু সরাসরি ঘটনাস্থলে থেকে যারা অংশগ্রহণ করেছে, তাদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে সেই মামলাগুলোর এখনও তদন্ত চলছে। এছাড়া আমাদের ট্রাফিক অফিসে আগুন দিয়ে একজন ট্রাফিক পুলিশকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। যাকে পরবর্তী সমেয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করানোয় বাঁচানো গেছে। সেই মামলাটিও তদন্তাধীন রয়েছে। সেই মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদানকারী অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সরাসরি যারা ‘ফুট সোলজার’ হিসেবে কাজ করেছে, তাদের অনেককেই চিহ্নিত করা যায়নি। সে কারণেই তদন্ত বিলম্বিত হচ্ছে।’’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি ও বেসরকারি অফিসে হামলা-ভাঙচুর, আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর, পুলিশ হত্যা, থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে আগুনের ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৪৪টি, ঢাকা বিভাগে ৯টিসহ মোট  ৫৩টি মামলা দায়ের করা হয় ঢাকায়। এছাড়া একই কর্মসূচিকে ঘিরে সারাদেশে আরও ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার দুই বছরের মধ্যে ঢাকায় তিনটি ও চট্টগ্রামে একটি মামলার অভিযোগপত্র  দাখিল করে পুলিশ। বাকি মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়নি।

/এআরআর/এমএনএইচ/