জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফে মোটা অংকের বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জনতা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে। প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা জামানত নিয়ে এই এনজিওটি নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড দেয়। এরপর শুরু হয় প্রশিক্ষণ। কিন্তু শেষে আর কোথাও যোগদান করানো হয় না তাদের। কারণ ইউনিসেফ কোনও এনজিওকে কর্মী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়নি।
এরই মধ্যে ইউনিসেফে লোভনীয় চাকরির কথা বলে অন্তত ৩০ জনের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জনতা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টরা। ইউনিসেফের ‘আউট সোর্সিং সুপারভাইজার’ ও ‘মেসেঞ্জার’ পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তারা দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ আছে। সুপারভাইজার পদে ৩৬ হাজার টাকা ও মেসেঞ্জার হিসেবে ২৮ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে বলে তাদের পক্ষ থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের প্রলোভন দেখানো হয়।
এই ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেকে। জনতা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনে তিন লাখ টাকা দিয়ে সুপারভাইজার পদে চাকরির নিয়োগপত্র নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নূর মোহাম্মদ। তিনি জানান— চলতি বছরের ২ মে যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টিতে এনজিওটির অফিসে আবু নাসের ইমতিয়াজ, শাহাদাত হোসেন ও মো. ইউসুফ পাটোয়ারীর মাধ্যমে জামানতের নামে তিন লাখ টাকা নেয়।
এরপর প্রার্থীদের ইউনিসেফের লোগো সংবলিত প্যাড ব্যবহার করে নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। নিয়োগ নিশ্চিতের পর ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউনে গ্রিনল্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু চাকরিতে যোগদানের সময় এলে গড়িমসি শুরু করে জনতা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
একপর্যায়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন নূর মোহাম্মদ। একইভাবে প্রতারণার শিকার হন মো. বিল্লাল হোসেন। তার ভাষ্য, ‘আমাকে ইউনিসেফে আউট সোর্সিং সুপারভাইজার পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জামানত নেয়। নিয়োগপত্র, আইডি কার্ডসহ সব নেওয়ার পর প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগদান করতে গেলেই বুঝতে পারি প্রতারণার শিকার হয়েছি।’
ইউনিসেফে লোভনীয় চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় গত ২২ আগস্ট দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। মামলার এজাহারে উল্লিখিত প্রতারকরা হলেন— জনতা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম, বরিশালের বানারীপাড়ার রফিকুল ইসলাম, ভোলার লালমোহনের মো. আলমগীর, জামালপুর মেলান্দহের মো. মামুনুর রশীদ, নাসের সিকিউরিটি অ্যান্ড আউট সোর্সিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নাসের ইমতিয়াজ, শ্যামপুরের শাহাদাত হোসেন ও ভোলার লালমোহনের মো. ইউসুফ পাটোয়ারী। তাদের মধ্যে যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টির জনতা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের অফিস থেকে মো. রফিকুল ইসলাম, মো. আলমগীর ও মো. মামুনুর রশীদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে ইউনিসেফের বরাত দিয়ে এসআই বিল্লাল জানান, এমন কোনও নিয়োগের কথা তারা জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা ইউনিসেফে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা এমন কোনও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না বলে আমাদের নিশ্চিত করেছেন।’
ডিএমপি ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতারণার সব ধরনের প্রাথমিক প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত কয়েকজনের নাম পেয়েছি যারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জানতে পেরেছি আরও অনেকে এভাবে প্রতারিত হয়েছেন। তারা আমাদের কাছে আসছেন। তাদের কাছ থেকে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’