‘বাজার অর্থনীতির কারণে দুর্নীতিবাজরা অনেক সক্রিয়’

দুদকের আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনবাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, ‘নিয়ন্ত্রক কাঠামো (রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক) ছাড়া বাজার অর্থনীতিতে যাওয়ায় আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বাণিজ্যে আর শিল্পেও বেড়েছে। এতে চুরি-ডাকাতি বাড়ে, বাংলাদেশেও বেড়েছে। কারণ বাজার অর্থনীতিতে গেলে দুর্নীতিবাজরা অনেক সক্রিয় হয়ে যায়।’ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলেক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করছে বলে মনে করেন মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। দুর্নীতি দমনে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি। তার কথায়, ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের জন্য একটা পরিমণ্ডল প্রয়োজন, বিচার করে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। সমাজে যদি ঢেউ তোলা যায় যে, দুর্নীতি ভালো জিনিস নয় তাহলে কাজে আসতে পারে। দুর্নীতিবাজদের বিচার করা কঠিন হলেও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব।’

আলোচনা সভায় ই-কমার্স ব্যবসায় কর নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তার ভাষ্য, ‘ই-কমার্সে উচ্চবিত্তরাই কেনাকাটা করে থাকেন। তারা টেলিফোনে অর্ডার দেন, ঘরে পণ্য চলে আসে, এরপর ক্রেডিট কার্ডে টাকা আদান-প্রদান করা হয়। একমাত্র বাংলাদেশেই এটা হয়ে থাকে। এখানে কর বসানোর জন্য পাঁচ বছর ধরে বলছি, কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না।’

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কঠোর সমালোচনা করে সাবেক গভর্নর বলেন, ‘রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়া প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে চলে গেলে বিপদ। এই যে মোবাইল ফান্ড ট্রান্সফার নামে যে মোবাইল ব্যাংকিং চলছে, আমি এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। এক মাস হলো এটাকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিবর্তে বলা হচ্ছে মানি ট্রান্সফার।’

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা ট্রান্সফার করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন— ‘বগুড়ায় আমার এক শিক্ষককে কিছু টাকা পাঠাতে গিয়ে দেখি, সেখানে গুনে গুনে ২ শতাংশ কেটে রেখেছে। তারপর সেখানে গিয়ে টাকা তুলতে গেলে তার কাছ থেকেও টাকা কাটা হয়েছে। এ রকম লুটপাট ও ডাকাতি করছে। যেহেতু কোনো নিয়ামক পরিমণ্ডল নেই কাউকে ধরা যাচ্ছে না। এদিকে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে ৫০ পয়সা লাগে। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কয়েক লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এখানে কোনও নিয়ামক পরিমণ্ডল নেই।’

দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে এখানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমিশনের দুই কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব শামসুল আরেফিন।