গোয়েন্দা জালে ‘মাল্টি ক্রিমিনাল’ চক্র

 

‘মাল্টি-ক্রিমিনাল’-চক্ররাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় ‘মাল্টি ক্রিমিনাল’ চক্রের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যাত্রী সেজে ভাড়া নিয়ে গাড়ি চুরি, ড্রাইভারকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, মাইক্রোবাসে করে ছিনতাইয়ের মতো সংঘবদ্ধভাবে ধারাবাহিক অপরাধ করে আসছিল এ চক্রটি।  ইতোমধ্যে এই চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ। তারা হলো—আল আমিন (২৪),  বাবুল শেখ (৩১), বাবুল আকতার (৩৫) ও জাহিদুল হক মুন্সি (৩০)। গাড়ি চুরি ও অপহরণের ঘটনায় তাদের গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ডিবি উত্তর বিভাগের এডিসি নিশাত রহমান মিথুন বলেন, ‘এই চক্রটি এক ধরনের অপরাধে সীমাবদ্ধ নয়। ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে অপহরণ, গাড়ি চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধগুলো করে আসছিল। আর তাদের নেতৃত্ব দিতো ফরিদপুর আলফাডাঙ্গার বাবুল আকতার। প্রতিটি গ্রুপে ৬-৭ জন সদস্য থাকে। তাদের সংগ্রহ করা ও পরবর্তী  কাজের দিকনির্দেশনাও দিতো সে।

গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর উত্তম ফলিয়া নামের একজনকে অপহরণ করে এই চক্র। প্রথমে ঢাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে চক্রের মূল হোতা বাবুল। রাত ৮টায় মাদারীপুরের ভাঙ্গা শিমুলিয়া বাজারে পৌঁছায় তারা। স্থানীয় আল আমিন হোটেলে খাবারের জন্য মাইক্রোবাসের চালক উত্তম ফলিয়াকে ডেকে নিয়ে যায়। খাবার শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে ৪-৫ জন তাকে ধরে পার্শ্ববর্তী বিলের কাছে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে থাকা মানিব্যাগ, মোবাইল, স্বর্ণের একটি আংটি ও চাবিসহ গাড়ি ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তী সময়ে অপহৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। খবর পেয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করতে যায় ডিবি পুলিশ। কিন্তু ডিবির উপস্থিতি টের পেয়ে অপহৃতকে ফেলে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা।

এ বিষয়ে ডিবি (উত্তর) এডিসি নিশাত রহমান মিথুন বলেন, ‘গাড়ি ভাড়ার কথা বলে লোকটিকে (উত্তম ফলিয়া) নিয়ে যায়। লোকটাকে অপহরণ করে বিকাশে টাকা নেয়। তেমন কোনও তথ্য ছিল না। পরবর্তী সময়ে ঘটনাটি জানতে পেরে আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করি।’

গাড়ি ভাড়ার নামে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় গত বছরের ৯ অক্টোবর ধানমন্ডি থানার মামলা দায়ের করেন উত্তম ফলিয়া। মামলাটি তদন্ত শুরু করে ডিবি পুলিশ। তদন্তের এক পর্যায়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আশুলিয়া, সাভার ও নবীনগর এলাকা থেকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এই অপরাধী চক্রের ভয়াবহ তথ্য। অপহরণ, গাড়ি চুরি, মাইক্রোবাসে যাত্রী সেজে ছিনতাই অহরহ করে আসছিল তারা। রাজধানীসহ খুলনা, দৌলতপুরঘাট, মাওয়াঘাট, ফরিদপুর ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব অপরাধ সংঘটিত করতো তারা।

চক্রটির বিষয়ে ডিবি উত্তরের এডিসি কাজী শফিকুল আলম বলেন, ‘তারা একাধারে অপহরণ, ছিনতাই, গাড়ি চুরি, যাত্রী সেজে ছিনতাই সবই করতো।তারা মূলত হ্যাবিচুয়াল অফেন্ডার। তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’

ডিবি উত্তরের ডিসি (যুগ্ম পুলিশ কমিশনার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) শেখ নাজমুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘একই চক্রকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলাম। এদের বিরুদ্ধে মামলার আগে থেকেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। তাদের মূল হোতা বাবুলকে ফরিদুপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিন ধরনের অপরাধের কথা স্বীকার করছে। তাদের ‘মাল্টি ক্রিমিনাল’ বলা যায়। এই চক্রের বাকি সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’’ অচিরেই বাকিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।