হাতে লেখা মামলাতেই শুরু সড়ক আইনের প্রয়োগ

ওভারব্রিজের বদলে নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরাহাতে লেখা কেস স্লিপের (মামলার রশিদ বই) মাধ্যমে নতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর প্রয়োগ শুরু করেছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। প্রাথমিক পর্যায়ে কেউ গুরুতর অপরাধ করলে মামলা বা জরিমানা করা হচ্ছে। রবিবার (১ ডিসেম্বর) থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের চারটি বিভাগ এ আইনের প্রয়োগ শুরু করেছে। কেউ যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখছেন ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে ট্রাফিক সার্জেন্টদের কাছে এখনও কেস স্লিপ বই হস্তান্তর করা হয়নি।

ট্রাফিক বিভগের একজন অতিরিক্ত কমিশানার (এডিসি) বা  সহকারী কমিশনারকে (এসি) প্রধান করে প্রতিটি জোনে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। যারা গুরুতর অপরাধ করছেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি টিম সকালে ৫টি এবং বিকালে ৫টি করে মামলা করতে পারবে বলে জানা গেছে। গত দুই দিনে কয়টি মামলা ও কী পরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে সেসব তথ্য জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
ডিএমপি ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগের উপ- কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন আইন সম্পর্কে আমরা এখনও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপশি ট্রাফিক পুলিশের কাজগুলো চলামান রয়েছে। নতুন আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে প্রাথমিকভাবে একজন সিনিয়র ট্রাফিক কর্মকর্তার নের্তৃত্বে একটি টিম বানিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’

ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্ত পার হওয়ার নির্দেশ থাকলে অনেকেই নিচ দিয়ে পার হচ্ছেনট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছরের ১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়ন ও কার্যকরের নির্দেশনা দেয় সরকার। নির্দেশনা দেওয়ার পরপরই আইনটি প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। কারণ ট্রাফিক বিভাগের প্রস্তুতির কিছু বিষয় ছিল। আবার নতুন আইন সম্পর্কে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরাই জানতেন না। আইন সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা করানো হয়।এছাড়া প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ করা হয়। ১ ডিসেম্বর থেকে হাতে লেখা কেস স্লিপের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তবে আইন অমান্য করে যারা সড়কে চলাচল করছেন তাদের একঘণ্টা ট্রাফিক সচেতনতার বিষয়ে কাউন্সিলিং করা হচ্ছে।
ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। ডিসেম্বর থেকে নতুন আইনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে। যারা গুরুতর অপরাধ করছেন তাদেরকে মামালা বা  জরিমানা করা হচ্ছে।’
রবিবার ও সোমবার (১ ও ২ ডিসেম্বর) রাজধানীর হাউজবিল্ডিং, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বনানী, মহাখালী, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, রিজয় সরণি, কাওরান বাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক আইন অমান্য বা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়।

নির্দিষ্ট জায়গায় না দাঁড়িয়ে যেখানে সেখানে থামানো হচ্ছে গাড়ি ট্রাফিক সদস্যরা বলছেন, সাধারণ মানুষ নতুন সড়ক আইনকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে তারা যখন সড়ক ব্যবহার করছেন নিজেরাই আইন মানছেন না।

তবে যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। তারা জানিয়েছে, এই আইনের বিষয়ে চালাক-পথচারী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা প্রয়োজন। সচেতনতা না বাড়লে আইন দিয়ে কোনও কাজ হবে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরার আজমপুর, বনানী, বিশ্বরোড় এলাকায় পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য একটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। তবে পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনও সড়ক পার হচ্ছেন। হাউজব্রিল্ডিং, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বনানীসহ বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহণগুলো সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়াচ্ছে না। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া সড়কের নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী ওঠা-নামাও করছেন না।
উত্তরা আজমপুরের কর্মরত পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট এনামুল বলেন, ‘সবাই যদি মেনে চললে সড়কে কোনও বিশৃঙ্খলা হয় না। কিন্তু নতুন আইন হওয়ার পরও বাস চালকরা নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ায় না। এছাড়াও যাত্রীরাও নির্দিষ্ট স্থানে থেকে ওঠা-নামা করে না। আইন বাস্তবায়ন করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

নির্দিষ্ট জায়গায় না দাঁড়িয়ে যেখানে সেখানে থামানো হচ্ছে গাড়ি
ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা সড়ক পারাপার হচ্ছিলেন আমিনুল নামে একজন পথচারী। তার সঙ্গে একটি ভারী বোঝাও ছিল। ঝুঁকি নিয়ে কেন সড়ক পার হচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ভারী বোঝা নিয় ওই ব্রিজে উঠতে পারুম না। তাই নিচ দিয়া পার হচ্ছি। নিচ দিয়ে গেলে সমস্যা কি?’
ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) নিউটন দাস বলেন, ‘আমরা নতুন আইন প্রয়োগে কাজ করছি। যাদের অপরাধ খুব গুরুতর তাদের মামলা বা জরিমানা করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রেও সর্বনিম্ন জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলামান রয়েছে। আইন অমান্য করলে এক ঘণ্টা কাউন্সিলিং দেওয়া হচ্ছে।’