রাজধানীতে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু

 

লাশরাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা হেফাজতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত কল্পনা বেগমের (৩৫) লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, হাজতখানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত কল্পনা বেগম কেরানীগঞ্জে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় ৯৯৯ থেকে একটি ফোন আসে। ফোন কলকারী জানান, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশের একটি বাসায় অসামাজিক কার্যক্রম চলছে। এরপর পুলিশ সেখানে গিয়ে তিন জন নারী ও একজন পুরুষকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তারা হলো সেলিনা (৪৫), কল্পনা (৩৫), শাহিনূর (২২) ও সোহাগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আটককৃতদের থানায় নিয়ে আসার পর রাত ১টার দিকে কল্পনা হাজতখানায় চিৎকার শুরু করে। একপর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুলিশ দ্রুত তাকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠান। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রথমে নারীর নাম জোৎস্না জানা গেলেও পরে জানা যায় তার নাম কল্পনা। তার স্বামীর নাম সেলিম। তিনি পেশায় গাড়িচালক। তাদের বাড়ি কেরানীগঞ্জে।’

নিহতের স্বামী সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোমবার বিকাল ৩টার দিকে বাসা থেকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে কল্পনা বের হয়। এরপর তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। পরিবারের সবাই তাকে খুঁজছিল, কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। মঙ্গলবার ভোরে ফোনটি পুলিশ চালু করার পর আমরা জানতে পারি কল্পনা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। এরপর সেখানে গিয়ে লাশ দেখতে পাই।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বলেছে স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আমরা লাশ শ্বশুরবাড়ি শরীয়তপুরে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কোনও অভিযোগ নেই।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ওয়াহিদুজ্জামান জানান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। একজন ম্যাজিস্ট্রেট সুরতহাল করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ওই নারীদের যে বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে সেটি সরকারি কোয়ার্টার। সেলিনা বেগমের স্বামীর নামে বরাদ্দ। সেলিনা বেগম তার পরিবার নিয়ে ওই বাড়িতে থাকেন।

এদিকে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। মঙ্গলবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই উদ্বেগ জানায়। সংগঠনটি জানায়, গাজীপুরে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনার ৫ দিন পর আবারও মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশের হেফাজতে আরেক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি আমরা।

আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন এবং মৃত্যুর এসব অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করার দাবি জানাচ্ছি।