ভাড়া করা বাসের নাম পরিবর্তন করে ডাকাতি করতো চক্রটি

বিভিন্ন রুটের গাড়ি ভাড়া নিয়ে সেই গাড়ির নাম পরিবর্তন এমনকি রঙ দিয়ে অন্য রুটের নাম লিখে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে আসছিল চক্রটি। যারা এসব বাসে উঠতেন তারাই সর্বস্ব হারাতেন। এজন্য চক্রটি সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত  সময় বেছে নিতো। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে আসছিল চক্রটি।

সাভারের একটি হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এমনই তথ্য পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানান পিবিআই-এর ঢাকা জেলার এসআই সালেহ ইমরান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার আসলাম এবং  টিটু মিয়া (২৮)। একজন ড্রাইভার, আরেকজন হেলপার। সোমবার (২৬ জানুয়ারি) গভীর রাতে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সালেহ ইমরান বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের নিরালা পরিবহনের একটি বাস কুয়াকাটা যাওয়ার কথা বলে ৩ দিনের জন্য গত বছরের ৪ অক্টোবর ভাড়া নেয় ডাকাত দলের একটি চক্র। কিন্তু কুয়াকাটা নাকি গাড়ির নাম পরিবর্তন করে ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে রাতের বেলা ডাকাতি করে আসছিল এই চক্রটি। এছাড়া সর্বস্ব হারিয়ে গাড়ির নাম্বার যেন চিনতে না পারে, সেজন্য ডাকাত দলের সদস্যরা নিতো ভিন্ন ভিন্ন কৌশল।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরান বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। নাম পরিবর্তন করা বাস দিয়ে গত ৪ অক্টোবর রাতে মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়িতে ডাকাতির কাজ শেষ করে ফেরার সময় রবিউল নামের ব্যক্তি আশুলিয়ার নবীনগর থেকে ওই বাসে উঠে। বাসের ভেতরে ডাকাতির সময় রবিউল চিৎকার করলে তাকে ডাকাত সদস্যরা চেপে ধরে ও দলনেতা হুইলরেঞ্জ দিয়ে আঘাত করে। এসময় ঘটনাস্থলেই রবিউল মারা যায়।

তারা সাভার, ধামরাই ও যাত্রাবাড়ীতে থেকে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাসে ডাকাতি করে আসছিল বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত বছরের ৫ই অক্টোবর নিহত হোটেল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম লস্কর ভাগিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য কর্মস্থল মিরপুর থেকে সাভারের জামগড়ায় যান। ভাগিনার সঙ্গে দেখা করে স্থানীয় ইসলামিয়া হোটেল মালিকের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বিকেলে জামগড়া থেকে ফিরে আসেন রবিউল। ওইদিন সন্ধ্যা ৭ টার সময় তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে মেয়ের সাথে শেষ কথা বলেন তিনি। পরে রাত ১২টার দিকে একই মোবাইল থেকে তার মায়ের ফোন নম্বরে ফোন করে রবিউল খুন হয়েছে বলে জানায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। পরে সাভারের বলিয়ারপুরের যমুনা ন্যাচারাল পার্কের গেটের পাশ থেকে রবিউল ইসলাম লস্করের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাফিজা বেগম অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৬।  পরে মামলাটির তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলা।

গত ১৩ই অক্টোবর সাভার থেকে ডাকাত দলনেতা বসির মোল্লাকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও ডেমরা থেকে আরও ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সকলেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।