বাসায় ‘নিহত’ স্ত্রীর লাশ নিয়ে রাজপথে এসে দুর্ঘটনার নাটক স্বামীর!

বাসায় ‘নিহত’ স্ত্রীকে প্রাইভেটকারে তুলে হাতিরঝিলে এসে দুর্ঘটনার নাটক করার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। নিহত স্ত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর পুলিশ ওই ব্যক্তিকে আটক করে। বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, চার ব্যক্তি ওই নারীর হাত-পা ধরে ঝুলিয়ে বাসার সিড়ি দিয়ে নামছে। নিহত নারীর স্বজনরা তার স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (৩ এপ্রিল) সকালে এই ঘটনাটি ঘটে। নিহতের স্বামী সাকিবুল আলম মিশু পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদের বাসা গুলশান-২ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর রোডে। বাসা থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে স্বামী-স্ত্রী বের হন। হাতিরঝিল আমবাগান এলাকায় রাস্তায় আইল্যান্ডের ওপর গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দিলে স্বামী সাকিবুল আলম ডান হাতে সামান্য আঘাত পান এবং গাড়িতে থাকা তার স্ত্রী ঝিলিক আলম (২৩) গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে ঢামেক হাসপাতাল নিয়ে আসলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সকাল সোয়া ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

তবে স্বামীর আচরণ রহস্যজনক মনে হওয়ায় পুলিশ তাকে জেরা করে। খোঁজ নেয় তার গুলশানের বাসায়। এরপর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ঝিলিককে বাসা থেকেই অচেতন অবস্থায় বের করা হয়। এরপর স্বামী আসিকুল আলম মিশুকে আটক করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

সত্যতা নিশ্চিত করেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

নিহত ঝিলিকের মা জানান, ঝিলিক ও মিশু ভালোবেসে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। আট মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে তাদের। প্রায়ই ঝিলিককে নির্যাতন করতো মিশু। তিনি বলেন, এরকম অনেক মেয়েকে খুন করা হয়, কিন্তু বিচার হয় না।

ঝিলিকের মামী মনোয়ারা বেগম ঢামেক মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করেন। তিনি জানান, ঝিলিকের গ্রামেরবাড়ি মুন্সীগঞ্জ।

মামী বলেন, ছেলেদের পরিবার বেশ সম্পদশালী। মিশু তেমন কিছুই করতো না। তারা অনেক বড়লোক বলে আমরা তাদের বাড়িতে যেতাম না।  আমাদের মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তার বিচার চাই।

মেয়ের মা আসমা বেগম জানান, তার স্বামী (ঝিলিকের বাবা) আনোয়ার হোসেন বছর খানিক আগে মারা গেছেন। তাদের তিন মেয়ে, এক ছেলে। ঝিলিকেরর মা তার অন্য সন্তানদের নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর  থাকেন।

গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখছি। স্বামীসহ দুই জনকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ আটক করেছে। নিহতের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত ঝিলিকের দেবর ফাহিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঝিলিকের বাসাতেই মৃত্যু হয়েছে। তবে তার ভাই কেন দুর্ঘটনার কথা বলেছেন, তা তার জানা নেই।

আরও পড়ুন- হাতিরঝিলে প্রাইভেটকারে স্ত্রীর মৃত্যু, স্বামী পুলিশ হেফাজতে