মার্শাল কোর্টে দণ্ডিত হয়ে চাকরিচ্যুত

৪০ বছর পর ওবায়দুল ফিরে পাচ্ছেন চাকরিসহ সব সুবিধা

আড়াই টাকা অনিয়মের দায়ে মার্শাল কোর্টের মাধ্যমে ১৯৮২ সালে কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ সহকারী মো. ওবায়দুল আলম আকনের সাজা বাতিল সংক্রান্ত রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে ওবায়দুল আলম সরকারি চাকুরি সংক্রান্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ফিরে পাবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। 

আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৮ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। 

আদালতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। অন্যদিকে মো. ওবায়দুল আলম আকনের পক্ষে শুনানি করেন জেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকন কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে পাট সম্প্রসারণ সহকারী হিসেবে ১৯৭৪ সালে চাকরিতে যোগ দেন। এর মধ্যে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি সরকারের কাছ থেকে পুরস্কারও পান। কিন্তু চাকরির সময় পাঁচ প্যাকেট পাটের বীজ বিক্রিতে তিনি আড়াই টাকা অর্থাৎ প্রতি প্যাকেটে ৫০ পয়সা করে বেশি নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন এক ব্যক্তি।

১৯৮২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সামরিক শাসনামলে সেই অনিয়মের ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগে তাকে দুই মাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই আদেশের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

এরপর ২০১১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এইচএম এরশাদের জারি করা সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপরই চাকরি ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আকন। 

ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ওই ব্যক্তিকে তার উপযুক্ত বা প্রকৃত পদে বহাল করে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়াসহ চাকরিতে পূনর্বহালের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক শাসনামলের সেই অনিয়মের ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগে ওবায়দুল আলম আকনকে দেওয়া দণ্ড ও জরিমানার আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। হাইকোর্টে তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার নাসিমা আক্তার চৌধুরী।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে আপিল আবেদন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আপিল আবেদন খারিজ করেন। ফলে ওই ব্যক্তিকে তার উপযুক্ত বা প্রকৃত পদে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়াসহ চাকরিতে পুনর্বহাল আদেশ আপিলেও বহাল থাকে। 

তবে ১৯৮২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকারের সামরিক শাসনামলে সেই দুই মাসের দণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা অবৈধ করে দেওয়া রায় আংশিক সংশোধন করা হয়।

আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন জানায়। শুনানি শেষে সে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলেন আপিল বিভাগ।