কোথা থেকে অস্ত্র ভাড়া করছে ডাকাতরা?

রাজধানীর আশেপাশে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর-ধামরাই এলাকায় বাসাবাড়িতে কিংবা যাত্রীবাহী পরিবহনে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকটি চক্রের সদস্যরা ডাকাতির কাজে ভাড়ায় আনা অস্ত্র ব্যবহার করে। ডাকাতি করতে গেলে বাধার মুখে পড়লে তাদের বন্দুকের গুলিতে আহত হয় অনেকে। এমনকি খুনের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে এই ডাকাত চক্রটি। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সাভারে একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা তদন্তে এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই সূত্র জানায়, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এতে কাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

ডাকাতির ঘটনায় রিমান্ডে থাকা ডাকাত ময়নাল হকের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১৩ আগস্ট ধামরাই এলাকা থেকে ময়নাল হককে গ্রেফতারের পর রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ডাকাতি করতে গিয়ে এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগও করেছে। তবে কারাগারে বসেই ডাকাতির পরিকল্পনা করে চক্রটি। পরবর্তীতে জামিনে বের হয়ে সংঘবদ্ধ চক্রটি আরও বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে এমন তথ্য জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, ময়নাল হক জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআইকে জানিয়েছে ডাকাত ওবায়দুলের সঙ্গে গরু চুরি থেকে শুরু হয় তাদের এ ধরনের অপতৎপরতা। পরবর্তীতে ময়নাল নিজে ডাকাত চক্র গড়ে তোলে। যা সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই ও  গাজীপুর এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করে। ডাকাতির মালামাল তারা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে যে যার মতো নিয়ে যেত। সুবিধামতো সময়ে লুট করা স্বর্ণালঙ্কার কিংবা বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে দিতো।

তবে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্ময়কর আরও একটি তথ্য দেয় ময়নাল। ডাকাতির কাজে কারাভোগ করে জামিনে থাকা তিন থেকে চার সদস্য বর্তমানে বিভিন্ন পরিবহনের চালকের দায়িত্বে। চালকের দায়িত্বে থাকায় যাত্রীবাহী পরিবহনে যাত্রীদের জিম্মি করে যেকোনও সময় যেকোনও ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তবে পিবিআই তাদের ওপর  নজরদারি রেখেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজন ডাকাতের নাওম এসেছে। ডাকাত ওবায়দুল, বিষু, মোরশেদ, রিপন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও সেখান থেকে অনেক সময় তাদের তৎপরতা সম্পর্কে ময়নাল পিবিআইকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই সালেহ ইমরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডাকাতি করতে গিয়ে তাদের বন্দুকের গুলিতে আহতের ঘটনায় অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে আমরা খতিয়ে দেখছি। তদন্ত চলছে। ডাকাতিতে সম্পৃক্ত আরও কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।

তিনি বলেন, এই চক্রটি এখন পর্যন্ত গাজীপুর ধামরাই সাভার আশুলিয়া এলাকায় ২০টির মতো ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও কারাভোগের পর আবার একই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। তবে মামলাটি পিবিআই-এ আসার পর আমরা তদন্ত করে অনেকটাই সফল হয়েছি। জামিনে যারা বাইরে রয়েছে তাদের ছাড়াও সবার প্রতি আমরা নজরদারি রেখেছি।

পিবিআই-এর ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রিমান্ডে ময়নাল হক এর কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এছাড়া ডাকাতির কাজে যে অস্ত্র ভাড়ায় ব্যবহৃত হতো সে বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা পেয়েছি।