X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

২৭ মে সারা দেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি অটোরিকশা চালকদের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ মে ২০২৪, ১৩:৩২আপডেট : ২০ মে ২০২৪, ১৭:১৯

ঢাকা মহানগরে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, বিআরটিএ এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের ঘোষণার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে ‘রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ইজি বাইক সংগ্রাম পরিষদ’। পাশাপাশি থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত ও কার্যকর করে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের দ্রুত নিবন্ধন, লাইসেন্স প্রদান ও রুট পারমিটসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। দাবি আদায় না হলে আগামী ২৭ মে সারা দেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

সোমবার (২০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সংগঠনটির নেতারা। এর আগে শতাধিক অটোরিকশাচালক মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন। এতে প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তার একপাশে যান চলাচল সীমিত হয়ে যায়।

সমাবেশে সংগঠনটির নেতারা বলেন, কেন এই সিদ্ধান্ত? কার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত? ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন ঢাকা মহানগরের প্রধান সড়কে চলাচল করে না। এটা মূলত মহানগরের অলিগলিতে চলে। কারণ সেখানে কোনও গণপরিবহন নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ এই ধরনের যানবাহনে চলাচল করে। আর মাত্র ৬ ভাগ যাত্রী নিয়ে ঢাকা মহানগরের প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তা দখল করে যানজট সৃষ্টি করে প্রাইভেট গাড়ি। তারপরেও কেন এই বাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা। এই বাহনের সঙ্গে চালক, মালিক, মহাজন, গ্যারেজ মালিক, চার্জিং ব্যবসায়ী, শ্রমিক মেস পরিচালনাকারী ও মোটর-রিকশা পার্টস, ব্যাটারিসহ সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। ঢাকা মহানগরে এ সংখ্যা আনুমানিক ৫ লাখের ওপরে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করে এ গণপরিবহন বন্ধ করা হলে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী লাখ লাখ মানুষ ও তাদের পরিবারের দায়-দায়িত্ব কে নেবে?

তারা বলেন, ২ টনের একটি এসিতে ৬ ঘণ্টার ১৬ ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে। অথচ একটা ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ব্যাটারি চার্জে ৩.৫-৪ ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে। অর্থাৎ ২ টনের এসিতে ১-২ জন মানুষের ঠাণ্ডা হওয়াটা জরুরি না সমপরিমাণ বিদ্যুতে ৪ জন মানুষের আত্মকর্মসংস্থান ও ২০ জন মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা, কোনটা জরুরি? আর অপচয়ের তো কোনও সুযোগই নেই, বরং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ভাষায়, বিদ্যুৎ ব্যবহারে তাদের রিটার্ন বেশি। কারণ তাদের বিদ্যুৎ বিল আবাসিক বিল থেকে অনেক বেশি। এরা বিদ্যুৎ চুরিও করে না। দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ বিদ্যুৎ এমনিতেই ব্যবহারের অভাবে অলস পড়ে থাকে, যার জন্য সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়।

নেতারা আরও বলেন, বিআরটিএ’র এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এই যানবাহন বন্ধের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট ২০১৮ অনুযায়ী এটি অনুমোদিত না। কিন্তু ইতোমধ্যে ইলেকট্রিক মোটরযান চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা পাস হয়েছে ও ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পথে। ব্যাটারিচালিত যানবাহন এই নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত। ফলে মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট এখানে প্রযোজ্য নয়। আর নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কথা বলা হয়েছে। এটাও একটি মিথ্যা কথা।

নিরাপত্তাজনিত কী সমস্যা হয়েছে তার কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উপাত্ত হাজির না করে লাখ লাখ মানুষের রুটি রুজিতে হাত দেওয়ার অধিকার বিআরটএ'র নেই। এটি পরিবেশবান্ধব, শব্দ ও বায়ুদূষণ করে না, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বলে এটা এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন। ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বাহনের ইঞ্জিনের সক্ষমতা, সাশ্রয়ী, বিদ্যুতে রিটার্ন বেশি ও পরিবেশবান্ধব। তিনি এই বাহনকে বাংলার টেসলা বলে সম্বোধন করছেন। ইতোমধ্যে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট মহাসড়ক ছাড়া সর্বত্র চলাচলে আদেশ প্রদান করেছেন। আর তখন পরিবহনমন্ত্রী, বিআরটিএ ও দুই মেয়রের এই ঘোষণা কাউকে খুশি করতে বা কোনও মহলকে আশ্বস্ত করতে করা হচ্ছে কিনা তাও অনুসন্ধান জরুরি।

সমাবেশে সংগঠনটির নেতারা সড়ক পরিবহন মন্ত্রী, বিআরটিএ ও ঢাকা মহানগরের দুই মেয়রের ঘোষণার পর মিরপুর, লালবাগ, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রিকশাআটক, ব্যাটারি খুলে নেওয়া, ডাম্পিং ও চালক-মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের হয়রানির এবং মিরপুর এলাকায় আন্দোলনরত রিকশা শ্রমিকদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা না করে মন্ত্রী, বিআরটিএ ও মেয়রের এই অযৌক্তিক, পরিবেশবিরোধী, গণবিরোধী ও লাখ লাখ মানুষকে কর্মহীন করে বেকারের মিছিল দীর্ঘ করার অগণতান্ত্রিক ও তুঘলকি সিদ্ধান্ত বাতিলের জোর দাবি জানান। অন্যথায় এই লাখ লাখ কর্মহীন ও বেকার চালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ২৭ মে সারা দেশের ৬৪ জেলায় তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ইজি বাইক সংগ্রাম পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি জালাল আহমেদের সভাপতিত্বে ও অর্থ সম্পাদক রোখশানা আফরোজ আশার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী, সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ সদস্য আবু নাঈম খান বিপ্লব, রাহাত আহমেদ, এস এম কাদির, ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক দাউদ আলী মামুন, সদস্য সেকান্দার আলী ও আবদুস সালাম।

সমাবেশ শেষে তারা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল করে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ করেন।

/এএজে/আরআইজে/
সম্পর্কিত
মগবাজারে হোটেলে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু: কেয়ারটেকার গ্রেফতার
ঢাকা সিটি কলেজক্যাম্পাসে নতুন সভাপতির প্রবেশ ঠেকাতে দুদিন পাঠদান বন্ধ!
হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যু: ময়নাতদন্তে বিষক্রিয়ার সন্দেহ
সর্বশেষ খবর
৯ কোটি টাকা অনুদান পাচ্ছে ৩২টি চলচ্চিত্র
৯ কোটি টাকা অনুদান পাচ্ছে ৩২টি চলচ্চিত্র
মানুষের কাছে ভোট দেওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য বিকল্প বিএনপি ছাড়া অন্যটি নেই: মান্না
মানুষের কাছে ভোট দেওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য বিকল্প বিএনপি ছাড়া অন্যটি নেই: মান্না
রংপুর-৪ আসনে এনসিপির এমপি প্রার্থী হিসেবে আখতারের নাম ঘোষণা
রংপুর-৪ আসনে এনসিপির এমপি প্রার্থী হিসেবে আখতারের নাম ঘোষণা
সরকারবিরোধী বক্তব্য নয়, বিএনপির আলোচনা সভায় আত্মসমালোচনা
সরকারবিরোধী বক্তব্য নয়, বিএনপির আলোচনা সভায় আত্মসমালোচনা
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লিতে সংসদীয় প্যানেলের বৈঠকে যা আলোচনা হলো
বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লিতে সংসদীয় প্যানেলের বৈঠকে যা আলোচনা হলো
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু