দুই মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে দুদকের মামলার দুটি ধারায় মোট ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে দুটি দণ্ড একই সঙ্গে চলায় তাকে মোট ৫ বছরের সাজা খাটতে হবে বলে আদালত জানিয়ে দিয়েছেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের জেল খাটতে হবে তাকে।
আজ মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের আদালত আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে বিচারক বলেন, আসামির বিরুদ্ধে দুদক দু’টি অভিযোগ করেন। এরমধ্যে দুদক আসামির ‘নালিশি বাড়ি’ নির্মাণে ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকার তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে অর্জন করার অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয় এবং গুলশান শাখার প্রাইম ব্যাংকের জমাকরা ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকার তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে অর্জনের দাবি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়।
আদালত আরও বলেন, আসামি লুৎফুজ্জামান বাবর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক একজন আইন প্রণেতা ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েও সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণভাবে সম্পদ অর্জন করায় তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর যথাক্রমে ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তি যুক্তিযুক্ত মনে করি। তবে আসামির ১৭ বছর কারাদণ্ড এবং অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচনাক্রমে আসামির সম্পদের তথ্য গোপনের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬ (২) ধারায় তিন বছর এবং ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম বলে বিচারক উল্লেখ করেন।
এর আগে আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরকে কারাগার থেকে সরাসরি আদালতের এজলাসে হাজির করা হয়। এসময় পুলিশের কড়া নিরাপত্তা দিয়ে তাকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। আদালতের রায় ঘোষণার পরে তাকে একইভাবে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় মাধ্যমে সরাসরি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আদালত বাবরকে দুদকের এই মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের কারণে ৫ বছর ও তথ্য গোপনের কারণে ৩ বছর পৃথক দুই ধারায় মোট ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালে মামলাটি দায়ের করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই বছরই মামলাটিতে অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হয়। প্রায় একযুগ সময়ে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আজ মামলাটির রায় দিলেন আদালত।
এরই মধ্যে ২০০৪ সালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত তিনবারের এই সংসদ সদস্য।
এর আগে গত ৪ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের আদালতে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্যে এই দিন ধার্য করেন। ২১ সেপ্টেম্বর একই আদালতে আসামি বাবর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।
মামলাটিতে সাত জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
মামলাটিতে বাবরের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৬ টাকার অবৈধ সম্পদ রাখার অভিযোগ আনা হয়। তার মধ্যে প্রাইম ব্যাংক এবং এইচএসবিসি ব্যাংক দুইটি এফডিআরে ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণ বাবদ ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকা গোপন করার অভিযোগ করা হয়।
ওই ঘটনায় ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি এই আসামির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করার অভিযোগে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রূপক কুমার সাহা তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।