যৌতুকের জন্য অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতন, আত্মহত্যার চেষ্টার পর হাসপাতালে মৃত্যু

যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়ির শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূ। ওই গৃহবধূর নাম সুরাইয়া নেওয়াজ লাবন্য (১৭)।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে মাতৃগর্ভে মারা যাওয়া অপরিপক্ক একটি কন্যাশিশু প্রসব করেন ওই নারী।

সুরাইয়া নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার রহিমপুর গ্রামের গৃহশিক্ষক আরিফুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের আবাসিক সার্জন ডা. আইউব হোসাইন বলেন, অন্তঃসত্ত্বা সুরাইয়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এই দগ্ধ হওয়ার ফলে গর্ভেই মারা যায় শিশুটি।

তিনি বলেন, ওই নারী ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত কন্যা সন্তান প্রসব করেন তিনি। তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।

সুরাইয়ার বাবা আরিফুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহ জেলার দোবাউরা উপজেলার আবু তাহের মিস্ত্রীর ছেলে প্রাইভেট কার চালক শাহিন আলমের সঙ্গে তার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২০ সালের ২ অক্টোবর তাদের বিয়ে হয়।

আরিফুল ইসলাম জানান, বিয়ের পর থেকে সুরাইয়া শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহে থাকতেন। কিছুদিন ভালোই কাটছিল। এক পর্যায়ে তাদের সংসারে নেমে আসে কালো ছায়া। ততদিনে তার গর্ভে আসে সন্তান। গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। ব্যবসা করার কথা বলে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। এমনকি সুরাইয়াকে চাহিদা অনুযায়ী খাবারও দেওয়া হতো না। অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করা হতো।

তিনি বলেন, মেয়েটি সবই সহ্য করতো। কখনও আমাদের জানাতো না। সে মনে করতো এসব কথা শুনলে হয়তো তার বাবা টেনশনে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

সুরাইয়ার মা আফরোজা তার সাড়ে তিন বছর বয়সে তাকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। সেই থেকে মেয়েটি ময়মনসিংহে তার নানা-নানির কাছে বড় হয়।

আরিফুল ইসলাম জানান, মেয়ের অসুস্থতার খবর শুনে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখি মেয়েটি খুবই অসুস্থ। তাই গত ১ আগস্ট সেখান থেকে আমার কাছে নিয়ে আসি। পরে এসব কিছু জানতে পারি। এতেই তারা শান্ত হয়নি। তার স্বামী তাকে প্রতিনিয়ত মোবাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এর মধ্যে একদিন গত শুক্রবার (৮ অক্টোবর) বিকালে সবার অগোচরে রান্না ঘরের পেছনে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে চিৎকার শুরু করে। চিৎকার শুনে তার দাদী সাদিয়া খাতুন দৌড়ে গিয়ে আশেপাশের লোকজনের সহযোগিতায় সেখান থেকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখানে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার বিকাল ৫টার দিকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান।

বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানিয়েছিলেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুল ইসলাম বলেন, দেখুন আমার মেয়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সে সময়ে আমার মাথায় কিছুই কাজ করছিল না। আমি স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে জানিয়ে মেয়ে নিয়ে ঢাকায় চলে আসি। বৃহস্পতিবার (১৪অক্টোবর) তার গর্ভে থাকা মৃত সন্তান প্রসব হওয়ার পর শিশুটিকে আজিমপুরে দাফন করে এসেছি।

তিনি বলেন, আজ মেয়েটির এই পরিণতির জন্য তার স্বামী ও স্বামীর বাড়ির লোকজন দায়ী। আমি তাদের বিচার চাই। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুরাইয়ার মৃত্যু হয়।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।