তিনি আসলে গাড়িচালকই নন, ক্লিনার

নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সেই ময়লার গাড়ির চালক রাসেল (২৬) আসলে করপোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত কোনও চালক নন। তিনি একসময় ডিএসসিসি’র ক্লিনার হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করতেন। এখন তার সেই ক্লিনারের চাকরিটিও নেই। ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, তিন বছর আগে রাসেল যখন ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন, তখন তিনি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি চালাতেন। এরপর তার চাকরি চলে গেলেও গাড়ি চালানো বন্ধ হয়নি।

কীভাবে, কোন যোগ্যতায়, কার অনুগ্রহে তার এই অবৈধ কর্মটি অব্যাহত ছিল- সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কেউ কিছুই বলতে পারেননি। তবে একাধিক সূত্র জানায়, তার মতো এমন আরও দুই শতাধিক চালক রয়েছে, যারা ক্লিনার ও পিয়ন হিসেবেই নিয়োগপ্রাপ্ত। কিন্তু পরিবহন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তার আশীর্বাদে অর্থের বিনিময়ে তাদের গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নিহত নাঈম হাসান

চালক হওয়ার সুবাদে করপোরেশনের তেল চুরি থেকে শুরু করে ইয়াবা পাচারের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে তারা। এ নিয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের কোনও তদারকি নেই বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস (উপ-সচিব) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘটনাটির জন্য আমরা খুবই মর্মাহত। যতদূর জানি ওই চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। তিন বছর ধরে সে গাড়িটি চালায়। তবে সে ক্লিনার কিনা সেটি ফাইল দেখে বলতে হবে। একজন ক্লিনার কীভাবে গাড়ির চালক হয়, এমন প্রশ্নে তিনি কোনও উত্তর দিতে রাজি হননি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিএসসিসি’র মোট যানবাহন ৫১৩টি। তবে নগর সংস্থাটির নিবন্ধিত চালক মাত্র ১৪৭ জন। ২০০টি গাড়ি চলে মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত চালক দিয়ে। তাদের অধিকাংশই ক্লিনার। যাদের নেই প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স। বাকি ১৬৬টি গাড়ি কীভাবে চলে সেটার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ। নিবন্ধিত চালক ছাড়া ডিএসসিসির বাকি গাড়িগুলো চলে অদক্ষ ও অনিবন্ধিত চালক দিয়ে। ফলে সংস্থার গাড়িগুলো দিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) নটর ডেম শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর আগেও এ ধরনের গাড়িতে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন পথচারী। চলতি বছরের মার্চে ডিএসসিসির একই ধরনের গাড়িচাপায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) টেলিফোন অপারেটর মোহাম্মদ খালিদ প্রাণ হারান। পরের মাসে যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা এলাকায় মো. মোস্তফা (৪০) নামের একজন রিকশাচালক নিহত হন।

ডিএসসিসির ময়লার গাড়ি বেপরোয়া গতিতে চালানোর অভিযোগও অনেক দিনের। বারবার দুর্ঘটনা ঘটালেও প্রতিকারে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কারও বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়নি।